আগামী কয়েক দশকে স্মৃতিভ্রংশতার (Dementia) শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানা গেছে, ২০৬০ সাল নাগাদ শুধু আমেরিকাতেই স্মৃতিভ্রংশতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে এক কোটিতে পৌঁছাতে পারে।
এর কারণ হিসেবে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের গড় আয়ু বাড়ার কারণে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, ফলে স্মৃতিভ্রংশতার মতো রোগের প্রকোপও বাড়ছে।
আগে যেখানে হৃদরোগ বা ক্যান্সারের কারণে অনেকে অল্প বয়সেই মারা যেতেন, সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষ এখন অনেক বেশি দিন বাঁচছেন। এর ফলস্বরূপ, বার্ধক্যজনিত রোগগুলোর ঝুঁকিও বাড়ছে।
তবে, আশার কথা হলো, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের চিকিৎসার মাধ্যমেও স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ওজেম্পিক (Ozempic) এবং উইগোভি (Wegovy)-এর মতো ওষুধগুলো মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে স্মৃতিভ্রংশতা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, যদিও স্মৃতিভ্রংশতা একটি জটিল রোগ, এর কিছু দিক পরিবর্তনযোগ্য। যেমন, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা, বায়ু দূষণ থেকে নিজেকে বাঁচানো, এবং বিষণ্ণতার সঠিক চিকিৎসা নেওয়া ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
শৈশবে ভালো শিক্ষা এবং জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানসিক উদ্দীপনাও স্মৃতিভ্রংশতা থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে, উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেক সময় মানুষ স্মৃতিভ্রংশতার প্রাথমিক লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন না বা রোগের শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চান না।
এর কারণ হলো, এই রোগ সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা এবং লজ্জা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মৃতিভ্রংশতা মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়। সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে এবং চিকিৎসা ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
এই রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সমর্থন এবং সামাজিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বয়স্কদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা, তাদের সামাজিক কার্যক্রমে উৎসাহিত করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
স্মৃতিভ্রংশতা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ জীবন উপহার দিতে পারি। তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক