নাউরু, একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে। তারা তাদের নাগরিকদের স্থানান্তরের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি অভিনব প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এই প্রকল্পের অধীনে, যে কেউ ১ লক্ষ ৫ হাজার মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার বেশি) বিনিয়োগের মাধ্যমে নাউরুর নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবে। তবে, এখানে একটি শর্ত রয়েছে: নাগরিকত্ব পেলেও, এই দ্বীপে বসবাস করার সুযোগ মিলবে না।
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত নাউরু, আট বর্গমাইলের একটি দ্বীপ। এটি সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের মাঝে অবস্থিত।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বীপটির উপকূলীয় অঞ্চল ভাঙনের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও, একসময় ফসফেট উত্তোলনের ফলে জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার কারণে দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, নাউরুর সরকার তাদের প্রায় ১২ হাজার নাগরিকের জীবন বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
নাউরুর প্রেসিডেন্ট ডেভিড অ্যাডেং জানিয়েছেন, “এটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা। আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।”
নাগরিকত্ব প্রকল্পের প্রধান আকর্ষণ হলো, নাউরুর পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন, যার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
পাসপোর্ট ইনডেক্সের প্রতিষ্ঠাতা আরমান্ড আর্টন মনে করেন, “দ্বিতীয় পাসপোর্ট একটি কৌশলগত সম্পদ। এটি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের সুযোগ বৃদ্ধি করে।”
ডলার ফ্লাইট ক্লাবের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা কাইল মাল্টজ এর মতে, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে আপনি একটি বাস্তব পরিবেশগত প্রকল্পে বিনিয়োগ করছেন, যা একটি ছোট সম্প্রদায়ের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।”
নাউরুর সরকার আশা করছে, এই বছর তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৬ জন আবেদনকারী পাবে। তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো ৫০০ জন আবেদনকারী সংগ্রহ করা, যা প্রায় ৫২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।
নাউরুর অর্থনৈতিক ও জলবায়ু স্থিতিশীলতা নাগরিকত্ব প্রকল্পের প্রধান এডওয়ার্ড ক্লার্ক জানিয়েছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য এই ধরনের উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।”
এই প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যবহার করা হবে নাউরুর নাগরিকদের জন্য উন্নত জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়। এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি সাহসী উদ্যোগ, যা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে।
তবে, এই প্রকল্পের সীমাবদ্ধতা এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো বিস্তারিতভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার