মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগকে গুটিয়ে ফেলার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি আদেশে তার স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে দেশটির শিক্ষাখাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ হলো, শিক্ষাখাতে ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করা এবং রাজ্যের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। দীর্ঘদিন ধরেই রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা এই বিভাগের বিলুপ্তি চেয়ে আসছিলেন। তারা মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষাখাতে স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
এর আগে, ১৯৭৯ সালে এই বিভাগটি গঠিত হয়েছিল। তবে সরাসরি বিভাগটি বন্ধ করার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাওয়া কঠিন হবে।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আদেশের ফলে শিক্ষা বিভাগের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হবে। তবে, ছাত্র ঋণ এবং ফেল গ্রান্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিভাগের অধীনেই থাকবে।
কর্মকর্তাদের মতে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষা বিভাগের অনেক ক্ষমতা রাজ্যগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে শিক্ষা বিভাগের কর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, বিভাগের প্রায় অর্ধেক কর্মীকে ছাঁটাই করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
কর্মীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে এবং সরকারি ডিভাইস ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষক সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট বেকি প্রিন্গল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অন্যরা জনসাধারণের স্কুল এবং আমেরিকার ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন।
তার মতে, এই পদক্ষেপের ফলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বৃদ্ধি পাবে, চাকরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং উচ্চশিক্ষা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
তাছাড়া, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা পরিষেবা এবং ছাত্র অধিকার সুরক্ষাও দুর্বল হয়ে পড়বে।
বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক স্কুলের অর্থায়ন মূলত রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলোর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই সরকারগুলোই পাঠ্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ করে।
শিক্ষা বিভাগ মূলত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ফেডারেল তহবিল সরবরাহ করে, যা ‘ইন্ডিভিজুয়ালস উইথ ডিজেবিলিটিজ এডুকেশন অ্যাক্ট’-এর আওতাভুক্ত।
এছাড়াও, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য টাইটেল ১ তহবিল এবং ফেল গ্রান্টের মতো ফেডারেল ছাত্র ঋণ পরিশোধের বিষয়টিও এই বিভাগের দায়িত্বে রয়েছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকের মতে, এর ফলে শিক্ষাখাতে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন