অস্ট্রেলিয়ার একটি স্কুলের পাথরের ফলকে লুকানো ছিল দুই দশক ধরে, ৬ কোটির বেশি আদিম জুরাসিক যুগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ! সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই বিরল আবিষ্কার করেছেন।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই বিশাল আবিষ্কারের কথা জানান।
বিগত ২০ বছর ধরে, অস্ট্রেলিয়ার বিলোয়েলা শহরের একটি স্কুলের পাথরের ফলকে সজ্জিত ছিল এই জীবাশ্ম। বিজ্ঞানীরা প্রথমে এর বয়স প্রায় ২০ কোটি বছর অনুমান করেছিলেন, যেখানে অসংখ্য ডাইনোসরের পায়ের ছাপ বিদ্যমান ছিল।
কিন্তু এর গুরুত্ব সম্পর্কে তারা নিশ্চিত ছিলেন না। এবার, জীবাশ্মের পৃষ্ঠ পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা ৪৭টি ভিন্ন ডাইনোসরের ৬৪টি পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন।
এই ডাইনোসরগুলো ‘অ্যানোমোয়েপাস স্ক্যাম্বুস’ নামক একটি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই প্রজাতিগুলো তাদের রেখে যাওয়া পায়ের ছাপের মতো চিহ্নের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়, যা তাদের জীবন্ত অবস্থার প্রমাণ দেয়।
এই আবিষ্কারটি অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বর্গমিটারে ডাইনোসরের পায়ের ছাপের সর্বোচ্চ ঘনত্বের একটি দৃষ্টান্ত। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এটি আদিম জুরাসিক যুগে ডাইনোসরদের প্রাচুর্যের একটি “অভূতপূর্ব চিত্র” তুলে ধরে।
এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ডাইনোসরের হাড় আবিষ্কৃত হয়নি। গবেষণাপত্রটি ‘হিস্টোরিক্যাল বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষক দলের প্রধান, ড. অ্যান্থনি রোমিলিয়ো জানিয়েছেন, “এমন জীবাশ্ম দীর্ঘদিন ধরে মানুষের দৃষ্টির বাইরে ছিল, যা সত্যিই আশ্চর্যের”।
তিনি আরও বলেন, “অস্ট্রেলিয়ায় জুরাসিক যুগের মাঝামাঝি সময়ে সবচেয়ে পুরনো ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। তাই, পায়ের ছাপের জীবাশ্ম আমাদের দেশে সেই সময়ের ডাইনোসরদের সম্পর্কে সরাসরি প্রমাণ দেয়”।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাথরের ফলকটি ডাইনোসরের আচরণ এবং কার্যকলাপ সম্পর্কে বিরল তথ্য সরবরাহ করে।
ড. রোমিলিয়ো উন্নত 3D ইমেজিং এবং আলোর ফিল্টার ব্যবহার করে পাথরের ফলকের গভীরে লুকানো পায়ের ছাপ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করেন।
আবিষ্কৃত পায়ের ছাপগুলোর আকার ৫ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। গবেষকদের ধারণা, ডাইনোসরগুলো সম্ভবত একটি নদী পার হচ্ছিল অথবা নদীর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল।
গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৩টি সারিতে ১৩টি ডাইনোসরের পায়ের ছাপ ছিল।
অবশিষ্ট ৩৪টি পায়ের ছাপ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই ডাইনোসরগুলোর পা ১৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা ছিল, তাদের শরীর ছিল বেশ ভারী এবং হাতগুলো ছিল ছোট।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ড. পল ওলসেনের মতে, “পায়ের ছাপগুলো ডাইনোসরের হাড়ের চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ এবং সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা হলে, এগুলো প্রচুর তথ্য সরবরাহ করতে পারে”।
তিনি আরও যোগ করেন, “পায়ের ছাপগুলো এমন সব প্রাণীর সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে, যাদের হাড় খুঁজে পাওয়া যায়নি। এগুলো আমাদের জন্য একটি মূল্যবান তথ্যভাণ্ডার, যা হাড়ের জীবাশ্মের অভাব পূরণ করে”।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং চীনের অন্যান্য স্থানে পাওয়া যাওয়া পায়ের ছাপ থেকে জানা যায়, ‘অ্যানোমোয়েপাস স্ক্যাম্বুস’ ছিল তিন আঙুলযুক্ত, দ্বি-পদবিশিষ্ট, এবং অর্নিথিসিয়ান গোত্রের একটি ডাইনোসর।
এই গোত্রের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে হাঁসমুখো এবং ট্রাইসেরাটপস-এর মতো তৃণভোজী ডাইনোসর অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের মুখের সামনে দাঁত ছিল।
গবেষকরা আরও দুটি স্থানে এই ধরনের জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন।
বিলোয়েলার কাছে ক্যালিডে মাইন-এ পার্কিং লটের প্রবেশমুখে ব্যবহৃত ২,০০০ কিলোগ্রামের একটি পাথরের ওপর তারা দুটি স্পষ্ট পায়ের ছাপ খুঁজে পান, যা অপেক্ষাকৃত বড় আকারের একটি ডাইনোসরের ছিল।
এছাড়া, ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা একটি পাথরের বইয়ের তাকেও একটি পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে।
ড. রোমিলিয়ো ব্যাখ্যা করেন, স্কুলের পাথরের ফলকটিও মূলত ক্যালিডে মাইন থেকে আনা হয়েছিল।
এই খনিটি একটি উন্মুক্ত খনি, যেখানে কয়লা উত্তোলনের জন্য উপরের পাথরগুলো সরানো হয়। এই ধরনের পাথর সরানোর সময় আদিম জুরাসিক যুগের পায়ের ছাপগুলো পাওয়া যেতে পারে।
ড. রোমিলিয়ো আরও জানান, “সেখানে আরও অনেক জীবাশ্ম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে, সেগুলোকে খুঁজে বের করা এবং সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। আমরা ভাগ্যবান যে এই পায়ের ছাপগুলো চিহ্নিত করা গেছে এবং এগুলো নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব হয়েছে”।
তথ্য সূত্র: সিএনএন