ফিজিতে সবুজ রঙের বিশাল আকৃতির যে গিরগিটিগুলো দেখা যায়, তাদের সেখানে আসার রহস্য অবশেষে উন্মোচন হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রায় সাড়ে তিন কোটি বছর আগে, উত্তর আমেরিকা থেকে ভেসে আসা গাছপালার ভেলায় চড়ে তারা পাড়ি জমিয়েছিল আট হাজার কিলোমিটারের বেশি সমুদ্র পথ।
সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে। এই আবিষ্কার জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ফিজির এই গিরগিটিরা কীভাবে সেখানে পৌঁছাল, তা নিয়ে এতদিন ধরে চলা বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছে নতুন এই গবেষণা। আগে মনে করা হতো, হয় তারা এশিয়া বা অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে, অথবা হয়তো অ্যান্টার্কটিকা হয়ে এসেছে।
কিন্তু নতুন গবেষণায় জানা গেছে, তাদের আদি বাসস্থান ছিল উত্তর আমেরিকায়। গবেষকরা বলছেন, সম্ভবত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছপালা উপড়ে গিয়ে বিশাল ভেলা তৈরি হয়েছিল, আর সেই ভেলায় চড়ে এইসব সরীসৃপ আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়।
ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকরা দেখেছেন, ফিজির গিরগিটির সবচেয়ে কাছের প্রজাতি হলো উত্তর আমেরিকার মরুভূমিতে বসবাসকারী একটি গিরগিটি প্রজাতি।
গবেষকরা এই যাত্রাপথের সময়কাল সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছেন। তাদের মতে, প্রায় চার থেকে বারো মাস সময় লেগেছিল এই সমুদ্রযাত্রা সম্পন্ন করতে।
তবে নতুন কিছু মডেলিং থেকে জানা যায়, সম্ভবত আড়াই থেকে চার মাসের মধ্যেই তারা ফিজিতে পৌঁছেছিল।
দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় টিকে থাকার মতো বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে গিরগিটির। তারা তীব্র গরম, খাবার ও জলের অভাব—সবকিছুই সহ্য করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের বেশি শক্তির প্রয়োজন হয় না, তাই তারা দীর্ঘ সময় খাবার ছাড়াই বাঁচতে পারে।
এই গবেষণা শুধু ফিজির গিরগিটির আগমন রহস্যই উন্মোচন করেনি, বরং কীভাবে একটি প্রজাতি দূরবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে, সেই বিষয়েও নতুন ধারণা দিয়েছে।
ভবিষ্যতে, বিজ্ঞানীরা এই ধরনের গবেষণা চালিয়ে অন্যান্য দ্বীপের প্রাণীজগতের ইতিহাস সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য আবিষ্কার করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন