পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানগুলোতে উদ্বাস্তু হওয়া ফিলিস্তিনিদের জীবনে নেমে এসেছে গভীর দুঃখ আর অনিশ্চয়তা। জেনিন ও ত্বলকর্মে শরণার্থী শিবিরগুলোতে চালানো হামলায় ঘরবাড়ি হারিয়েছেন হাজারো মানুষ।
আহতদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া থেকে শুরু করে খাদ্য ও আশ্রয় প্রদানের কাজটি করছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা।
ওমাইমা ফারায নামের ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উদ্বাস্তু মানুষদের সাহায্য করছেন। তিনি জানান, ইসরায়েলি সেনারা তাদের সহযোগিতা করতে বাধা দেয়।
অনেক সময় তাদের হুমকিও দেওয়া হয়। একবার এক বৃদ্ধ লোক টানা চার দিন ধরে নিজের বাড়িতে আটকা ছিলেন। ইসরায়েলি সেনারা তাদের সেখানে যেতে দেয়নি।
পরে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস-এর হস্তক্ষেপে স্বেচ্ছাসেবকেরা ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
তলকর্মের আল-আওদা সেন্টার এবং বেথলেহেমের লাই সেন্টার-এর স্বেচ্ছাসেবকেরা ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের শিকার মানুষদের তালিকা তৈরি করছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন। মূলত নারী ও তরুণ স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত এই দলটি আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা, খাদ্য ও জরুরি সামগ্রী বিতরণ করে থাকে।
তবে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরওয়া)-কে পশ্চিম তীরে কাজ করতে বাধা দেওয়ায় তাদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্বেচ্ছাসেবকেরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যান এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের সব ধরনের সাহায্য করেন। তাদের কাছে রয়েছে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সরঞ্জাম এবং খাদ্য ও বস্ত্র।
স্বেচ্ছাসেবক আলাহ্ বলেন, “স্থানীয় সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বেচ্ছাসেবকেরা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের অনেকের বাড়িঘরও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
ওমাইমার ১৮ বছর বয়সী ভাই নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি ড্রোন হামলায়।
জেনিনের কাছে কাফর দান গ্রামে, শিশুদের জন্য একটি বিশেষ আয়োজন করা হয়। সেখানকার ফ্রিডম থিয়েটার-এর উদ্যোগে বাস্তুচ্যুত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খেলাধুলা ও আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়।
থিয়েটারের কর্মী শাতা জারার বলেন, “আমরা শিশুদের জন্য থিয়েটার নিয়ে এসেছি। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ।
কাফর দানে আশ্রয় নেওয়া এক মা জানান, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার বিভীষিকা এখনো তাদের মনে গেঁথে আছে। আকাশ থেকে হেলিকপ্টারের আওয়াজ, ড্রোন হামলা, সৈন্যদের অভিযান—এসব দৃশ্য তাদের তাড়া করে ফেরে।
উম মুহাম্মদ নামের ৬৭ বছর বয়সী এক নারী জানান, ২০০২ সালে দ্বিতীয় ইনতিফাদার সময় তিনিও বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। জেনিন শরণার্থী শিবিরে তার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়।
সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও তাকে কষ্ট দেয়। তাই, তিনি এখন অন্য বাস্তুচ্যুতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান সেখানকার মানুষের জীবনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই এখনো অব্যাহত আছে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিবেদন