মহাকাশে বর্জ্যের (Space Junk) কারণে বিমান চলাচলে বাড়ছে ঝুঁকি, সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা।
বিমানযাত্রা বর্তমানে অনেক নিরাপদ, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (International Air Transport Association) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ফ্লাইটে একটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
যেখানে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতি ৮ লক্ষ ১০ হাজার ফ্লাইটে ঘটেছে মাত্র একটি দুর্ঘটনা।
কিন্তু বিমানের নিরাপত্তা বাড়াতে যেখানে এয়ারলাইন্সগুলো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে, সেখানে মহাকাশের কিছু বর্জ্য তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সম্প্রতি, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।
সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন, মহাকাশের আবর্জনা বা স্পেস জাঙ্ক (space junk) বিমানের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদিও বিমানের সঙ্গে এইসব বর্জ্যের সংঘর্ষের সম্ভাবনা এখনো কম, তবে তা বাড়ছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের কাছাকাছি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রতি বছর মহাকাশ বর্জ্য প্রবেশের সম্ভাবনা ০.৮ শতাংশ। আর উত্তর-পূর্ব আমেরিকা, উত্তর ইউরোপ অথবা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বিমান চলাচলের স্থানগুলোতে এই ঝুঁকি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়া হলে তা অনেক অঞ্চলের অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলবে। তাই জাতীয় কর্তৃপক্ষের জন্য এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত—বিমান চলাচল বন্ধ করা হবে, নাকি ঝুঁকি নিয়েই তা চালু রাখা হবে।
গবেষকরা একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যেখানে ২০২২ সালে প্রায় ২০ টন ওজনের একটি রকেট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এটির সম্ভাব্য অবতরণ স্থান ছিল দক্ষিণ ইউরোপে, যার কারণে ফ্রান্স এবং স্পেনের কর্তৃপক্ষ তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
এর ফলে প্রায় ৬৪৫টি বিমানের ফ্লাইট বিলম্বিত হয় এবং কিছু বিমানের গতিপথ পরিবর্তন করতে হয়। এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলো, যেমন ইতালি, পর্তুগাল ও গ্রিসে বিমান চলাচলে চাপ বাড়ে, যা আরো একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সৌভাগ্যবশত, সেটি শেষ পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরে পতিত হয়।
মহাকাশে উপগ্রহ এবং অন্যান্য মহাকাশ যান পাঠানোর কারণে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে, যা বিমানের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
বর্তমানে, আকাশে বিমানের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিদিনের ফ্লাইট প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একই সময়ে, কক্ষপথে থাকা শনাক্তযোগ্য বস্তুর সংখ্যাও গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে।
গবেষকদের মতে, সামান্য পরিমাণ বর্জ্যও বিমানের ক্ষতি করতে পারে। তাঁদের হিসাব অনুযায়ী, এক গ্রামের একটি বর্জ্য বিমানের উইন্ডশিল্ডে আঘাত করলে বা ইঞ্জিনে প্রবেশ করলে তা বিমানের গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
৯ গ্রামের একটি স্টিলের টুকরা বিমানের কাঠামোকে ছিদ্র করতে পারে, আর ৩০০ গ্রামের বেশি ওজনের কোনো বর্জ্য পড়লে বিমান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
গবেষকরা এই সমস্যার সমাধানে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁদের মতে, সব মহাকাশ মিশন শেষ হওয়ার পরে রকেট বা অন্যান্য বর্জ্য নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সমুদ্রের গভীরে ফেলতে হবে।
বর্তমানে, মাত্র ৩৫ শতাংশ উৎক্ষেপণে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তাঁদের দাবি, এই নিয়ম মানা হলে বিমানের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার আগেই নীতিনির্ধারকদের এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে মহাকাশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লিজার