মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের (Martin Luther King Jr.) ওপর গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই (FBI)-এর গোপন নথি দ্রুত প্রকাশের জন্য তদবির করছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পদক্ষেপ ঘিরে উঠেছে বিতর্কের ঝড়।
অনেকেই মনে করছেন, কিং-এর ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করার উদ্দেশ্যে ট্রাম্প প্রশাসন এমনটা করছে।
১৯৬০-এর দশকে এফবিআই কিং-এর ওপর নজরদারি শুরু করে। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে চেয়েছিল তৎকালীন কেনেডি প্রশাসন।
এফবিআই প্রধান জে এডগার হুভারের নির্দেশে কিং-এর ব্যক্তিগত জীবন, বিশেষ করে নারীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ১৯৭৭ সাল থেকে এই সংক্রান্ত নথিগুলো সিল করা ছিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই উদ্যোগ সেই গোপন নথিগুলো জনসমক্ষে নিয়ে আসার একটি প্রচেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জনসাধারণের জানার অধিকার আছে কিং-এর হত্যাকাণ্ডের ‘সত্য’ সম্পর্কে। তবে, কিং-এর পরিবারের সদস্যরা এই দ্রুত নথি প্রকাশের বিরোধীতা করছেন।
তাঁদের আশঙ্কা, এই নথির মাধ্যমে কিং-এর সম্মানহানি হতে পারে।
বিখ্যাত জীবনীকার জোনাথন এইগ (Jonathan Eig), যিনি কিং-এর জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন, এই প্রসঙ্গে তাঁর মতামত দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, জনসাধারণের এফবিআইয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে জানার অধিকার আছে, তবে কিং-এর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশি আলোচনা করা উচিত নয়।
বরং, এফবিআই কীভাবে কিং-এর সম্মানহানি করার চেষ্টা করেছিল, সেটিই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত। এইগ আরও মনে করেন, কিং-কে একজন ‘ফাউন্ডিং ফাদার’-এর (Founding Father) মতোই সম্মান দেওয়া উচিত, তাঁর ব্যক্তিগত দুর্বলতাগুলো বিবেচনা না করেই।
এই বিতর্কের কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণের যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বিরোধিতা করে। এমন পরিস্থিতিতে কিং-এর ব্যক্তিগত জীবনের দুর্বলতাগুলো সামনে এনে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করা হতে পারে।
এফবিআই শুধু কিং-এর ওপর নজরদারিই চালায়নি, বরং তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করারও চেষ্টা করেছে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল, যার ফলে সংবাদমাধ্যম কিং-কে নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করতে শুরু করে।
এর ফলস্বরূপ, কিং-এর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এফবিআইয়ের এই পদক্ষেপগুলো তৎকালীন সময়ে কিং-এর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। এমনকি, ১৯৬৬ সালের একটি জনমত জরিপে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান কিং-কে অপছন্দ করতেন।
অনেকের মতে, এই নথির দ্রুত প্রকাশের পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তবে, কিং-এর জীবনীকার জোনাথন এইগ মনে করেন, মালকম এক্সের (Malcolm X) হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত এফবিআইয়ের গোপন নথি প্রকাশ করা হলে তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতো।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)