যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এবং ১৯৮৮ সালের ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইকেল ডুকাকিসের স্ত্রী কিটি ডুকাকিস ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। শুক্রবার রাতে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার ছেলে জন ডুকাকিস শনিবার টেলিফোনে এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
কিটি ডুকাকিস পরিচিত ছিলেন একজন সাহসী নারী হিসেবে, যিনি সবসময় সমাজের দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্টকে অন্যদের সাহায্য করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদ এবং মাদকাসক্তির সঙ্গে লড়াই করেছেন এবং সেই বিষয়ে সবসময় মুখ খুলেছেন।
মাইকেল ডুকাকিসের ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কিটি ডুকাকিসের অবদান ছিল অনেক। তিনি তার স্বামীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের পেছনেও তার প্রভাব ছিল। প্রচারণার সময় তিনি মাদকাসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনাগুলো সামনে নিয়ে আসেন এবং এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করেন।
১৯৮৭ সালে কিটি জানান, তিনি ২৬ বছর ধরে অ্যাম্ফিটামিন নামক মাদক দ্রব্য সেবন করতেন এবং পাঁচ বছর আগে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এছাড়া, তিনি অ্যালকোহল সেবনের কারণেও অসুস্থ হয়েছিলেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল।
১৯৯০ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী ‘নাও ইউ নো’-তে তিনি তার মাদকাসক্তির জন্য মায়ের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত ‘শক’ নামক বইয়ে তিনি জানান, ২০০১ সাল থেকে ইলেক্ট্রো-কনভালসিভ থেরাপির (ইসিটি) মাধ্যমে কীভাবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চলা মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পান।
তিনি লিখেছিলেন, এই চিকিৎসা তার জন্য নতুন এক জগৎ খুলে দিয়েছে।
ম্যাসাচুসেটসের বর্তমান গভর্নর মাওরা হিলি কিটি ডুকাকিসকে একজন ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, কিটি ছিলেন শিশুদের, নারীদের এবং শরণার্থীদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার একজন নেতা। তিনি মাদক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক তার সংগ্রামের কথা সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন, যা আমাদের সবার জন্য একটি অনুপ্রেরণা।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্ড্রিয়া জয় ক্যাম্পবেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, কিটি ডুকাকিসের এই ত্যাগ ও সাহস অন্যদের নিজেদের সত্য কথা বলতে অনুপ্রাণিত করবে। নর্থ-ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পলিসি স্কুলের পরিচালক মারিয়া ইভানোভা বলেন, কিটি ডুকাকিস জনজীবনে সততা, সহানুভূতি এবং শক্তি এনেছিলেন।
কিটি ডুকাকিস ও মাইকেল ডুকাকিসের পরিচয় হয় ম্যাসাচুসেটসের ব্রুকলিনে, যেখানে তারা দুজনেই হাই স্কুলে পড়তেন। ১৯৬৩ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের তিনটি সন্তান ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে নাৎসিদের হাতে নিহত হওয়াদের স্মরণে গঠিত ‘ইউনাইটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল কাউন্সিল’-এর সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও, তিনি উদ্বাস্তু বিষয়ক নীতি নির্ধারণী একটি গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।