শিরোনাম: মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের এক মামলার জেরে ইন্টারনেট পরিষেবা সংকটে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে প্রভাবের আশঙ্কা
বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের সাথে সাথে ইন্টারনেট এখন মানুষের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এমন পরিস্থিতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন একটি মামলার ফল ইন্টারনেট সেবার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
এই মামলার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরি এবং হাসপাতালগুলোতে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উদ্বেগের কারণ।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার মূল বিষয় হল, ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিকে (agency) কংগ্রেসের ক্ষমতা হস্তান্তরের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘ইউনিভার্সাল সার্ভিস ফান্ড’ (Universal Service Fund), যা প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি তহবিল।
এই তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগের খরচ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। ‘ই-রেট’ (E-Rate) এবং ‘লাইফলাইন’ (Lifeline)-এর মতো প্রোগ্রামগুলো এই তহবিলের অন্তর্ভুক্ত, যা কম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে।
মামলাটি মূলত ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (FCC)-এর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অভিযোগ উঠেছে, কংগ্রেস সরাসরি এই কমিশনকে (FCC) ক্ষমতা প্রদান করে তাদের কিছু দায়িত্ব দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘নন-ডেলেগেশন ডকট্রিন’-এর পরিপন্থী।
এই ডকট্রিন অনুযায়ী, কংগ্রেস তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা অন্য কোনো সংস্থাকে হস্তান্তর করতে পারে না।
যদি আদালত এই অভিযোগের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে ‘ইউনিভার্সাল সার্ভিস ফান্ড’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরি এবং হাসপাতালগুলোতে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অর্থ সংকট দেখা দেবে।
বিশেষ করে, গ্রামীণ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী, যারা এই প্রোগ্রামের ওপর নির্ভরশীল, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণকারী আইনজীবীরা বলছেন, এই ধরনের প্রোগ্রামগুলি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর নাও হতে পারে। তাদের মতে, কংগ্রেসের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই তহবিল পরিচালনা করা হলে, এর কার্যকারিতা আরও বাড়ানো সম্ভব।
তবে, অন্য একটি পক্ষের মতে, কংগ্রেসের অচলাবস্থার কারণে এমনটা হলে দরিদ্র মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
এই মামলার রায় জুন মাসের শেষ নাগাদ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। রায়ের ওপর নির্ভর করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারনেট পরিষেবার ভবিষ্যৎ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায়ের প্রভাব কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা এবং ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণের প্রচেষ্টাকেও প্রভাবিত করবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এর কথা বলি, তাহলে দেখা যায়, সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এই ধরনের একটি মামলার রায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইন্টারনেট প্রসারের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণ এবং বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আরও একবার মনে করিয়ে দেবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন