ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজারের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তার আগের মেয়াদের তুলনায়, বাজারে দরপতন হলেও এবার যেন ট্রাম্পের তেমন হেলদোল নেই। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারের এই দুর্বল চিত্র ট্রাম্পের নীতির প্রতি অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ।
শেয়ার বাজারের উত্থান-পতন সবসময় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, বাজার ভালো থাকলে তিনি প্রায়ই এর কৃতিত্ব নিতেন। নীতি পরিবর্তনেও তার আগ্রহ দেখা যেত, যদি বাজারের জন্য তা ক্ষতিকর হতো। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শুল্ক বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করছেন, ট্রাম্প যেন বাজারের খারাপ পরিস্থিতিতেও নির্বিকার।
ওয়াল স্ট্রিটের অভিজ্ঞ বিশ্লেষক এড ইয়ার্ডেনি’র মতে, বিনিয়োগকারীরা এখন বুঝতে পারছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের কঠোর মনোভাব নিছক কথার কথা নয়।
আগে, বাজারে দরপতন হলে হোয়াইট হাউস দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এমন একটা ধারণা ছিল। এটিকে ‘ট্রাম্প পুট’ নামে অভিহিত করা হতো। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই।
বরং, ট্রাম্পের নীতিগুলো অর্থনীতির দুর্বলতা আরও বাড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভও ২০২৫ সালের মধ্যে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দুর্বল কর্মসংস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত শুল্ক, সরকারি নিয়ম শিথিল করা এবং তেলের দাম কমানোর মতো ট্রাম্পের নীতিগুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে। তারা এই পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল নিয়ে সন্দিহান।
তবে, বাজারের উত্থান-পতন সবসময় সবকিছুর মাপকাঠি হতে পারে না। শেয়ার বাজারের ভালো ফল সবসময় সাধারণ মানুষের জন্য ভালো নাও হতে পারে। তাছাড়াও, শেয়ার বাজারের সিংহভাগ ধনী শ্রেণির হাতে থাকায় বাজারের উল্লম্ফন সম্পদ বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজারের এই চাপকে স্বল্পমেয়াদী সমস্যা হিসেবে দেখছেন। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে ভালো কর নীতি, নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে বাজার ভালো করবে। এমনকি, বাজার সংশোধনকে তিনি ‘স্বাভাবিক’ ও ‘স্বাস্থ্যকর’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সঙ্গে দ্বিতীয় মেয়াদের পার্থক্যটা বেশ স্পষ্ট। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ট্রাম্প জেতার পর বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল, কারণ তিনি মূলত ব্যবসা-বান্ধব নীতিগুলোর ওপর জোর দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের আগে শুল্কের তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে, সরকারি ব্যয় কমানো, ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই এবং উচ্চ শুল্কের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনিশ্চয়তা বাজারের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু বিনিয়োগকারী মনে করছেন, ট্রাম্প তাদের সতর্কবার্তা শুনছেন না। ১৯৯০ এর দশকে বন্ড মার্কেটের বিনিয়োগকারীদের নীতি পরিবর্তনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণপত্র বিক্রি করে দেওয়ার একটি ঘটনা ঘটেছিল। ইয়ার্ডেনির আশঙ্কা, শেয়ার বাজারেও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বাজারের এই অস্থিরতা ব্যবসা এবং ভোক্তাদের মধ্যে, বিশেষ করে উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোতে, ব্যয় সংকোচনের কারণ হতে পারে, যা কোম্পানির মুনাফাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং শেয়ারের দাম আরও কমিয়ে দেবে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজারের এই উত্থান-পতনকে সহ্য করার মানসিকতা দেখাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।