পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় ‘নো আদার ল্যান্ড’ চলচ্চিত্রের অস্কারজয়ী পরিচালক আহত, সেনাবাহিনীর হেফাজতে।
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় ‘নো আদার ল্যান্ড’ নামক অস্কারজয়ী প্রামাণ্যচিত্রের ফিলিস্তিনি সহ-পরিচালক হামদান বাল্লাল গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁর সহকর্মীরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এরপর ইসরায়েলি সেনারা তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বাল্লালের বাড়ি পশ্চিম তীরের সুসিয়া গ্রামে যান তাঁর সহযোগী পরিচালক বাসেল আদরা। বাল্লাল তাঁকে ফোন করে বিপদের কথা জানালে তিনি ছুটে যান। আদরা সেখানে পৌঁছে দেখেন, সামরিক বাহিনী বাল্লালকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে এবং আরও দু’জনকে পুলিশ গাড়িতে তোলা হচ্ছে।
আদরার ভাষ্যমতে, বাল্লালের বাড়ির বাইরে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী জড়ো হয়, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে পাথর ছুড়তে দেখা গেছে। সেখানে ইসরায়েলি পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিল। সেনারা কাছে যেতে চাওয়া যে কাউকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ছবিটির আরেক পরিচালক ইউভাল আব্রাহাম জানিয়েছেন, হামলায় বাল্লালের মাথা ও পেটে আঘাত লেগেছে। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর জিউইশ ননভায়োলেন্স (সিজেএনভি)-এর পাঁচজন কর্মীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁদের ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এক ডজনের বেশি বসতি স্থাপনকারী লাঠি, ছুরি ও একটি রাইফেল নিয়ে তাঁদের ওপর চড়াও হয়। এক ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের বাড়ির কাছে একটি ঘটনার সূত্র ধরে এই হামলা চালানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, জেনা নামের এক কর্মী জানান, ঘটনার রাতে যখন তাঁরা সুসিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন, তখন প্রায় ২০ জন মুখোশধারী তাঁদের ওপর হামলা করে। তিনি আরও জানান, হামলাকারীরা তাঁদের গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয় এবং টায়ারেও আঘাত করে। সিজেএনভি’র শেয়ার করা গাড়ির ড্যাশ ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, এক মুখোশধারী সরাসরি গাড়ির উইন্ডশীল্ডের দিকে পাথর ছুড়ছে। ছবিতে ভাঙা কাঁচের টুকরা দেখা গেছে।
একই দলে থাকা জশ কিমেলম্যান বলেন, ইসরায়েলি সেনারা ঘটনাটি দেখলেও তা থামাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
“আমরা তাদের (সেনাদের) বললাম যে তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। তারা (সেনা) বলল, সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে ছিল এবং বসতি স্থাপনকারীদের অনুসরণ করেনি,” কিমেলম্যান জানান।
উল্লেখ্য, ‘নো আদার ল্যান্ড’ প্রামাণ্যচিত্রটি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দ্বারা পশ্চিম তীরের একটি গ্রাম, মাসাফের ইয়াত্তায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ছবিতে সেখানকার একটি খেলার মাঠ ভেঙে দেওয়া, ইসরায়েলি সেনাদের হাতে আদরার ভাইয়ের নিহত হওয়া এবং বসতি স্থাপনকারীদের বিভিন্ন হামলার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এই ঘটনার আগে, চলতি মাসের শুরুতে, বাল্লাল, আদরা এবং আব্রাহাম একসঙ্গে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন। এই যৌথ ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি দলটির তৈরি করা চলচ্চিত্রটি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের তাঁদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার বিষয় নিয়ে তৈরি।
বাল্লাল, যিনি একজন ফিলিস্তিনি কৃষক, এর আগেও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। গত বছর তিনি সিএনএনকে জানান, বসতি স্থাপনকারীরা তাঁর জমিতে গবাদি পশু ছেড়ে দেয়। তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস হামলার পর থেকে বসতি স্থাপনকারীদের আগ্রাসন আরও বেড়েছে। বাল্লাল বেশ কয়েকবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনো ফল হয়নি।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ক্রমাগত বাড়ছে। শান্তি বিষয়ক সংগঠন পিস নাউ এবং কেরেম নাভোটের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা নির্মিত পশুপালন কেন্দ্র প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন