মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচআইভি গবেষণা খাতে অর্থায়ন হ্রাসের সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে এই মরণব্যাধি নিয়ে গবেষণা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এইচআইভি বিষয়ক গবেষণা প্রকল্পগুলোতে ফেডারেল সরকারের তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গবেষণা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রোগীদের চিকিৎসা সেবাও হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপের কারণে বিশ্বে এইচআইভি নির্মূলের প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এইচআইভি প্রতিরোধের গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য ফেডারেল অনুদান বন্ধ করা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। রুক্ষার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যাপক ড. পেরি হালকিটিস এক সাক্ষাৎকারে জানান, এইডস নির্মূলে আমাদের যে সক্ষমতা ছিল, এই সিদ্ধান্তের ফলে তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে সাত লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষাধিক মানুষ এইচআইভি পজিটিভ। উদ্বেগের বিষয় হলো, এদের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ জানেই না যে তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই তহবিল কমানোর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছে। তারা বলছেন, এই অর্থ এমন কিছু প্রকল্পে খরচ করা হচ্ছিল যা আমেরিকান জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধুমাত্র গবেষণা কার্যক্রমই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হিসেবে এইডস-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং মৃত্যুহারও বাড়তে পারে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে তহবিল সরবরাহ বন্ধ থাকলে বিশ্বে এইডস আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এইডস নির্মূলের জন্য গবেষণা অত্যন্ত জরুরি। গবেষণার অভাবে নতুন রোগী শনাক্তকরণ এবং তাদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। একইসঙ্গে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা এইচআইভি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানও কঠিন হয়ে পড়বে।
গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গবেষকরাও। অনেক গবেষক তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল হারাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এরই মধ্যে চাকরিও হারিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচআইভি নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ কার্যত একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, এর ফলে কয়েক দশক ধরে অর্জিত সাফল্যের ধারা ব্যাহত হবে এবং ভবিষ্যতে এইডস-এর বিরুদ্ধে লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এইচআইভি নির্মূলের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানে হলো, বিশ্বজুড়ে এইডস আক্রান্ত মানুষের জীবন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা। তাই, এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন