রান্নার তেল নিয়ে নতুন বিতর্ক: স্বাস্থ্যকর নাকি ক্ষতিকর? ট্যালো বনাম বীজ তেল- কোন পথ বেছে নেবেন?
খাবার তৈরিতে তেল একটি অপরিহার্য উপাদান। ভাজাভুজি থেকে শুরু করে তরকারি রান্না—তেলের ব্যবহার খাদ্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিন্তু কোন তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রায়ই বিতর্ক দেখা যায়। সম্প্রতি, গরুর মাংসের চর্বি বা ট্যালো এবং উদ্ভিজ্জ বীজ তেল নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আসুন, জেনে নিই এই দুই ধরনের তেলের ভালো-মন্দ দিকগুলো এবং স্বাস্থ্য সচেতন একজন মানুষ হিসেবে আপনার জন্য কোনটি উপযুক্ত।
ঐতিহ্যগতভাবে, পশ্চিমা বিশ্বে রান্নার জন্য পশুর চর্বি, যেমন—গরুর ট্যালো, ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, বিজ্ঞানীরা হৃদরোগের সঙ্গে পশুর চর্বির সম্পর্ক খুঁজে পান।
এরপর, সাবান, যন্ত্রপাতির জ্বালানি এবং মোমবাতির মতো শিল্পকার্যে ব্যবহৃত উদ্ভিজ্জ তেলকে স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে প্রচার করা শুরু হয়। এই পরিবর্তনের ফলে, রান্নার কাজে বীজ তেল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তবে, সম্প্রতি এই ধারণার পরিবর্তন ঘটছে। খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক বিশেষজ্ঞ আবার পুরনো দিনের রান্নার উপকরণে ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন।
তাঁদের মতে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে বীজ তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাঁরা গরুর ট্যালোর মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছেন। এই বিতর্কের কারণ হলো, বীজ তেল তৈরির প্রক্রিয়া এবং এর রাসায়নিক গঠন।
বীজ তেল তৈরি করতে উচ্চ তাপ ও চাপে বীজগুলোকে নিষ্পেষণ করা হয়। এরপর হেক্সেন নামক একটি রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করে তেল বের করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় তেলের মধ্যে থাকা কিছু উপকারী উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও, অতিরিক্ত পরিশোধনের কারণে বীজের তেলের স্বাভাবিক গুণাগুণও কমে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যানোলা তেল, যা ক্যানোলা বীজের থেকে আসে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তৈরি হয়।
অন্যদিকে, গরুর ট্যালো তৈরি হয় গরুর মাংসের চর্বি গলিয়ে। এই চর্বি সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করে জমাট বাঁধানো হয়।
ট্যালোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে, যা স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু উদ্বেগের কারণ। তবে, ট্যালোতে কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও বিদ্যমান থাকে, যা বীজ তেলে পাওয়া যায় না।
তাহলে, কোন তেল ব্যবহার করা ভালো? বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো একটি নির্দিষ্ট ধরনের তেলের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করা উচিত নয়।
বরং, খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের তেল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন—সর্ষের তেল, যা আমাদের দেশে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়, স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। এছাড়া, জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো তেল এবং নারকেল তেলও রান্নার জন্য ভালো।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, রান্নার তেলের স্বাস্থ্যগুণ নির্ভর করে এর ব্যবহারের ধরনের ওপর। অতিরিক্ত ভাজাভুজি বা উচ্চ তাপমাত্রায় তেল ব্যবহার করলে, তা স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে।
তাই, রান্নার ক্ষেত্রে তেলের পরিমাণ এবং রান্নার পদ্ধতি—দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. অ্যালিস এইচ. লিকটেনস্টাইন-এর মতে, “ডাটা বা তথ্যের ভিত্তিতেই আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিজ্ঞান সবসময় পরিবর্তনশীল। তাই, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং রান্নার উপকরণেও পরিবর্তন আসতে পারে।”
সুতরাং, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য রান্নার তেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন ধরনের তেলের ভালো-মন্দ দিকগুলো জেনে, খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন।
আপনার খাদ্য এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন