দক্ষিণ কোরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দাবানলের ভয়াবহতা, নিহত ১৯, ঘরছাড়া হাজার হাজার মানুষ।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী বাতাসের কারণে সৃষ্ট দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে এরই মধ্যে ধ্বংস হয়েছে দুই শতাধিক বাড়িঘর এবং বিভিন্ন স্থাপনা, যার ফলে প্রায় ২৭ হাজার মানুষকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। দেশটির আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
উইসিয়ং শহরে আগুন নেভানোর সময় একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে একজন পাইলট নিহত হয়েছেন। কোরিয়ার ইতিহাসে এটিকে তৃতীয় বৃহত্তম দাবানল হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যা প্রায় ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির ওপর বিস্তার লাভ করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাচীন একটি বৌদ্ধ মন্দিরও ভস্মীভূত হয়েছে, যার মধ্যে সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত কিছু ঐতিহাসিক কাঠামোও ছিল।
আগুনের লেলিহান শিখা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে আন্দং, উইসিয়ং, সানচেং এবং উলসান শহরগুলোতে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উইসিয়ং-এর গউনসা বৌদ্ধ মন্দিরের প্রায় অর্ধেক কাঠামো আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই মন্দিরের ভেতরে থাকা কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল একটি প্যাভিলিয়ন আকৃতির স্থাপনা, যা ১৬৬৮ সালে একটি ঝর্ণার উপরে তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও, ১৯০৪ সালে নির্মিত জোসিয়ন সাম্রাজ্যের একটি কাঠামোও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যবশত, অষ্টম শতাব্দীর একটি পাথরের বুদ্ধ মূর্তি নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে, স্থানীয় প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চেওংসং শহরে একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে প্রায় ৫০০ জন বন্দীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির বন বিভাগ দাবানল সতর্কতা সর্বোচ্চ ‘গুরুতর’ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে, যার ফলে জরুরি প্রতিক্রিয়ার জন্য অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করা হয়েছে, বন ও পার্কে প্রবেশাধিকার কঠোর করা হয়েছে এবং সামরিক ইউনিটগুলোকে লাইভ-ফায়ার অনুশীলন স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সানচেং শহরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আগুনে আটকা পড়ে চারজন দমকলকর্মী ও সরকারি কর্মচারী নিহত হয়েছেন। কর্মকর্তাদের ধারণা, মানুষের অসাবধানতার কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক সমাধিস্থলে ঘাস পরিষ্কার করার জন্য আগুন ব্যবহার করা অথবা ওয়েল্ডিংয়ের কারণে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা