দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিতর্কিত গান নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। ‘ডুবুল ই’ভূনু’ (Dubul’ ibhunu) শিরোনামের এই গানটিকে শ্বেতাঙ্গ গণহত্যার উস্কানি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি।
মাস্কের এই মন্তব্যের পরেই দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি এবং বর্ণবাদ বিষয়ক বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে।
গানটি গেয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক দল ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্সের (EFF) নেতা জুলিয়াস মালেমা। মূলত ১৯৮০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় গানটির জন্ম হয়।
‘ডুবুল ই’ভূনু’-র আক্ষরিক অর্থ হলো ‘বোয়ারদের হত্যা করো’ বা ‘শ্বেতাঙ্গ কৃষক নিধন করো’। ‘বোয়ার’ শব্দটি মূলত ডাচ বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
গানটি নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এর মূল কারণ হলো এর সরাসরি অর্থ এবং শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি তৈরি করার সম্ভাবনা।
যদিও গানটির সমর্থকেরা একে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি রূপ হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, এটি শ্বেতাঙ্গ নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। অন্যদিকে, সমালোচকেরা মনে করেন, এই ধরনের গান ঘৃণা ও সহিংসতার জন্ম দেয়।
ইলন মাস্কের মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি মাস্কের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন এবং গানটিকে শ্বেতাঙ্গ বিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্পের এই অবস্থানের কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন, শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর হামলার উদ্বেগকে তিনি রাজনৈতিক ফায়দার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গানটির তাৎপর্য অনেক গভীর। দেশটির ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC)-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অযোগ্যতার অভিযোগ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে মালেমার দল EFF-এর মতো বিরোধী দলগুলো নিজেদের আরও শক্তিশালী করতে চাইছে। এই প্রেক্ষাপটে, ‘ডুবুল ই’ভূনু’ গানটি তাঁদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
তবে, গানটি নিয়ে আইনি জটিলতাও রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আদালতের রায়ে গানটিকে ঘৃণা ভাষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আবার কোনো কোনো রায়ে একে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অংশ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে। এই বিতর্কের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই গান এবং এর সঙ্গে জড়িত বিতর্ক দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজে গভীর বিভাজন তৈরি করেছে।
এটি একদিকে যেমন শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি তৈরি করছে, তেমনি কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐতিহাসিক ক্ষোভকে উস্কে দিচ্ছে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা চলছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছে এবং সকলের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছে।
সব মিলিয়ে, ‘ডুবুল ই’ভূনু’ গানটি দক্ষিণ আফ্রিকার জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার একটি প্রতিচ্ছবি, যা দেশটির ভবিষ্যৎকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা