উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচন: এলন মাস্কের রাজনৈতিক ক্ষমতার পরীক্ষা।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে। এই নির্বাচন শুধু রাজ্যের বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রক দল নির্বাচন করবে তাই নয়, বরং এর ফলাফল নির্ধারণ করবে গর্ভপাত, শ্রমিক অধিকার এবং রাজ্যের কংগ্রেসনাল জেলার সীমানা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ভবিষ্যৎ।
আর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মূলত পরীক্ষিত হতে চলেছে টেসলা ও এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মালিক এলন মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাব।
উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে উদারপন্থী বিচারকদের। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে একজন উদারপন্থী বিচারক অবসর গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
ফলে, সেখানকার রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই আসনে ডেমোক্রেট সমর্থিত বিচারক সুসান ক্রফোর্ড এবং রিপাবলিকান সমর্থিত বিচারক ব্র্যাড শিমেলের মধ্যে মূল লড়াইটি অনুষ্ঠিত হবে।
এই নির্বাচনের জয়ী ব্যক্তি নির্ধারণ করবেন রাজ্যের ভবিষ্যৎ নীতি, যা গর্ভপাত বিষয়ক আইন, শ্রমিক সংগঠনগুলোর অধিকার এবং রাজ্যের কংগ্রেশনাল জেলার বিন্যাসকে প্রভাবিত করবে।
নির্বাচনটি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচার বিভাগীয় নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের খরচ ৮ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি।
এলন মাস্ক এই নির্বাচনে সরাসরি প্রবেশ করেছেন। তিনি গত বছর উইসকনসিনের একটি আইনের বিরুদ্ধে মামলা করার পর থেকেই এই রাজ্যে তার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এই আইনটি টেসলাকে রাজ্যে গাড়ির ডিলারশিপ খুলতে বাধা দেয়।
নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য মাস্ক তার ‘সুপার প্যাক’ (Super PAC)-এর মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন। যারা ‘বিচারকদের বিরুদ্ধে’ পিটিশন স্বাক্ষর করেছেন, তাদের প্রত্যেককে তিনি ১০০ ডলার করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত মাস্ক এবং তার সমর্থনপুষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী নির্বাচনে ২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করেছে। নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, যারা ভোট দেবেন, তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ১ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হবে।
তবে, পরে বিতর্কের জেরে তিনি তার এই ঘোষণা বাতিল করেন। পরে তিনি জানান, যারা পিটিশনের পক্ষে কথা বলবেন, তাদের এই অর্থ দেওয়া হবে।
এই বিষয়ে রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল জশ কল মাস্ক এবং তার ‘সুপার প্যাক’-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন এলন মাস্কের জন্য একটি ‘পরীক্ষা স্বরূপ’। সুসান ক্রফোর্ড এই বিষয়ে বলেন, “এলন মাস্ক নিশ্চিত করতে চান, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার দুর্বল করার ক্ষেত্রে যেন কোনো বাধা না থাকে।”
এই নির্বাচনের ফল শুধু উইসকনসিনের জন্য নয়, বরং এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতিতেও পড়তে পারে। কারণ, উইসকনসিন একটি ‘সুইং স্টেট’ (swing state) হিসেবে পরিচিত, যেখানে কোনো দলের জয় পাওয়া অনিশ্চিত থাকে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই রাজ্যে সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন। আবার ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন সামান্য ব্যবধানে জয়ী হন।
ফলে, এই রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
কিন্তু বর্তমানে রাজ্যের আদালতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ফলে, এসব নির্বাচনে এখন প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে।
নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ব্র্যাড শিমেল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্পও শিমেলকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ডেমোক্রেটরা এই নির্বাচনকে এলন মাস্কের বিরুদ্ধে একটি গণভোট হিসেবে দেখছেন। তারা মাস্কের সঙ্গে শিমেলের সংযোগ তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছেন, যাতে ডেমোক্রেট ভোটাররা ভোট দিতে উৎসাহিত হন।
নির্বাচনের ফল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যদি সুসান ক্রফোর্ড জয়ী হন, তাহলে ডেমোক্রেটদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
অন্যদিকে, ব্র্যাড শিমেল জিতলে রিপাবলিকানরা উৎসাহিত হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian