শিরোনাম: বন্ধুর মৃত্যু থেকে কমেডির পথে: এক নারীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে কাজ করা একজন নারীর বন্ধু বিয়োগের শোক কাটিয়ে কমেডির জগতে প্রবেশের এক অসাধারণ গল্প। দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে কিভাবে হাসির সন্ধান পাওয়া যায়, সেই গল্প শুনিয়েছে নুসাইবাহ ইউনুস।
নুসাইবাহ ইউনুসের বন্ধু ছিলেন হিশাম আল-হাশিমী। হিশাম ছিলেন একজন সাংবাদিক, যিনি ইরাকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করতেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে, হিশামকে তার বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা নুসাইবাহর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
হিশামের মৃত্যুশোক তাকে এতটাই নাড়িয়ে দেয় যে, তিনি তার জীবন নতুন করে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেন।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক কঠিন পেশা থেকে বেরিয়ে এসে নুসাইবাহ কমেডিকে বেছে নেন। কমেডি তার কাছে ছিল এক নতুন আশ্রয়স্থল। এর আগে, তিনি অক্সফোর্ড, হার্ভার্ডের মত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছেন।
ইরাকে থাকাকালীন সময়ে তিনি সেখানকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট কাছ থেকে দেখেছেন। যুদ্ধের বিভীষিকা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানুষের জীবনযাত্রার করুণ চিত্র – এসব কিছু তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
হিশামের মৃত্যুর পর নুসাইবাহ বুঝতে পারেন, জীবনটা খুব সংক্ষিপ্ত। তাই তিনি নিজের ভেতরের স্বপ্নকে সত্যি করতে চাইলেন। তিনি লন্ডনের একটি কমেডি ক্লাসে ভর্তি হন এবং স্ট্যান্ড-আপ কমেডি শিখতে শুরু করেন।
প্রথম দিকে মঞ্চে উঠতে তার ভয় লাগতো, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তার কমেডি পরিবেশনার বিষয়বস্তু ছিল ইরাকে তার কাজের অভিজ্ঞতা, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা এবং বিভিন্ন হাস্যকর ঘটনা।
কমেডি ক্লাসে তার পরিবেশনা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর তিনি তার জীবনের গল্প নিয়ে একটি উপন্যাস লেখার সিদ্ধান্ত নেন। উপন্যাসে তিনি তার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ইরাকে কাটানো সময়ের কথা তুলে ধরেন।
হাস্যরসের মাধ্যমে তিনি কঠিন বিষয়গুলো সহজভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার এই উপন্যাসটি পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
উপন্যাস লেখার পাশাপাশি, নুসাইবাহ এখনো কমেডি পরিবেশনা করেন। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এবং দর্শকদের হাসির খোরাক যোগান। তার মতে, কমেডি মানুষকে দুঃখ থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং জীবনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহস যোগায়।
সারা বিশ্বে তার পাঠক এবং শ্রোতারা এখন তাকে ভালোবাসে।
নুসাইবাহ ইউনুসের জীবন আমাদের দেখায় যে, শোক আর কষ্টের মধ্যেও বাঁচার আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করে, হাসির মাধ্যমে জীবনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান