একটি কিশোরীর ডায়েরি, যেখানে বিদ্রোহের আগুন ছিলো, সেই ডায়েরি থেকে ১৯৭০ দশকের এক আলো ঝলমলে সময়ের প্রতিচ্ছবি! অ্যাঞ্জেলা ইয়েগার নামের এক তরুণীর ব্যক্তিগত ডায়েরি, যা সম্প্রতি ‘আই ফিল ফেমাস’ নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে, আমাদের নিয়ে যায় ১৯৭০ দশকের শেষের দিকের নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের এক ভিন্ন জগতে, যেখানে ছিল পঙ্ক (punk) সংস্কৃতির উন্মাদনা।
সেই সময়ে, সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে একদল তরুণ-তরুণীর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সোচ্চার হয়েছিল, আর এই বিদ্রোহের ভাষা তারা খুঁজে পেয়েছিল সঙ্গীতে। অ্যাঞ্জেলার ডায়েরি যেন সেই সময়ের প্রতিচ্ছবি, যেখানে পঙ্ক সঙ্গীতের উন্মাদনা, ফ্যাশন, এবং সমাজের বিরুদ্ধে এক তীব্র ঘৃণা – সবই স্পষ্ট।
নিউ ইয়র্কের ইস্ট ভিলেজে বেড়ে ওঠা অ্যাঞ্জেলার জীবনে সঙ্গীতের প্রভাব ছিল গভীর। কৈশোরেই তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন টকিং হেডস (Talking Heads), ব্লন্ডি (Blondie)-র মতো ব্যান্ডের প্রতি। সেই সময়ে সিবিজিবি’স (CBGB’s)-এর মতো বিখ্যাত নাইটক্লাবগুলো ছিল তরুণ প্রজন্মের আশ্রয়স্থল। সেখানে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন সেই সময়ের অনেক কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে, যেমন – ডেবি হ্যারি, ডি ডি রামোন।
শুধু সঙ্গীত শোনা বা উপভোগ করাই নয়, অ্যাঞ্জেলার মধ্যে ছিল সবকিছুকে ধরে রাখার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তিনি কনসার্টে যেতেন, টেপ রেকর্ডারে গান রেকর্ড করতেন, এমনকি ব্যান্ড সদস্যদের ইন্টারভিউও নিতেন। তাঁর ডায়েরিতে সেই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী রয়েছে।
১৯৭৮ সালে অ্যাঞ্জেলা পাড়ি জমান লন্ডনে। সেখানে তিনি পরিচিত হন সেক্স পিস্তলস (Sex Pistols) এবং দ্য ক্ল্যাশ (The Clash)-এর মতো ব্যান্ডের সঙ্গে। তাঁর ডায়েরিতে উঠে এসেছে সেই সময়ের ব্রিটিশ পঙ্ক সংস্কৃতির উন্মাদনা। তিনি জো স্ট্রামার, বিলি আইডল-এর মতো সঙ্গীতশিল্পীদের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন।
অ্যাঞ্জেলার ডায়েরি শুধু একটি ব্যক্তিগত জার্নাল ছিল না, বরং এটি ছিল একটি যুগের প্রতিচ্ছবি। এই ডায়েরিতে একদিকে যেমন ছিল সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা, তেমনি ছিল সমাজের প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। তিনি ফ্যাশন, সংস্কৃতি এবং মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাক্ষী ছিলেন।
পঙ্ক সঙ্গীত অ্যাঞ্জেলার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এটি তাঁকে শিল্পী, লেখক এবং সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হতে সাহায্য করেছে। তাঁর মতে, পঙ্ক ছিল সেই সময়ের জন্য খুবই উপযুক্ত, যা তাঁর ভেতরের প্রতিভার বিকাশে সহায়ক হয়েছিল।
যদিও পঙ্ক-এর সেই উন্মাদনা এখন আর দেখা যায় না, অ্যাঞ্জেলা এখনও সেই সময়ের কথা স্মরণ করেন। তাঁর ডায়েরি আমাদের সেই সময়ের একটি উজ্জ্বল চিত্র দেখায়, যা তরুণ প্রজন্মের বিদ্রোহ এবং আত্ম-অনুসন্ধানের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: The Guardian