নব্বইয়ের দশকে, যখন সারা বিশ্বে সঙ্গীতের ধারাগুলো বিভাজিত ছিল, সেই সময়ে একজন শিল্পী এসেছিলেন, যিনি প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়েছিলেন। তিনি আর কেউ নন, ট্রেসি চ্যাপম্যান।
তাঁর গানগুলো যেন সমাজের নিচু তলার মানুষের কথা বলত, তাঁদের কষ্ট, তাঁদের স্বপ্ন, তাঁদের প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি ছিল সেগুলিতে। সম্প্রতি, এই কিংবদন্তি শিল্পীর প্রথম অ্যালবামটি আবার নতুন করে বাজারে এসেছে, আর তা নিয়েই কথা বলেছেন খ্যাতিমান লেখিকা জাদি স্মিথ।
১৯৮৮ সালের ১১ই জুন, লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফ্রি নেলসন ম্যান্ডেলা কনসার্ট’। সেই কনসার্টে স্টিভি ওয়ান্ডারের অসুস্থতার কারণে শেষ মুহূর্তে যোগ দেন ট্রেসি চ্যাপম্যান।
শুরুতে, প্রায় নব্বই হাজার দর্শকের মাঝে তাঁকে সেভাবে কেউ খেয়াল করেনি। কিন্তু যখন তিনি তাঁর গিটার হাতে তুলে নিলেন, আর গাইতে শুরু করলেন ‘ফাস্ট কার’, তখন যেন সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলেন।
তাঁর কণ্ঠের গভীরতা, গানের কথার সারল্য, আর সুরে ছিল এক অসাধারণ মাদকতা। জাদি স্মিথ সেই কনসার্টের কথা স্মরণ করে বলেন, “ট্রেসি চ্যাপম্যানকে দেখে মনে হয়েছিল, তিনি আমাদেরই একজন— আমাদের মতোই দেখতে, আর আমাদের গান গাইছেন।”
চ্যাপম্যানের গানগুলো শুধু সুরের মূর্ছনা ছিল না, বরং সমাজের কঠিন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি ছিল। তাঁর গানে শোনা যেত দারিদ্র্য, শ্রমিক শ্রেণির মানুষের জীবনসংগ্রাম, আর তাঁদের প্রতিবাদের কথা।
“টকিং অ্যাবাউট আ রেভোলিউশন” গানটিতে তিনি সমাজের পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন, যা আজও মানুষকে আলোড়িত করে। এই গানগুলো যেন এক একটি প্রতিবাদের ভাষা ছিল, যা সেই সময়ে আমেরিকার বর্ণবৈষম্য এবং সমাজের অন্য নানা অসাম্যকে তুলে ধরেছিল।
জাদি স্মিথ আরও উল্লেখ করেছেন, সেই সময়ে সঙ্গীতের জগৎ কতটা বিভক্ত ছিল। একদিকে ছিল পপ এবং রক গানের রমরমা, অন্যদিকে ছিল লোকসংগীতের ধারা।
কিন্তু ট্রেসি চ্যাপম্যান এই বিভাজন ভেঙে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর গানে সাধারণ মানুষের কথা বলেছেন, যা সকল শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁর গানের সরলতা, গভীরতা, আর সমাজের প্রতিচ্ছবি—এই সবকিছুই তাঁকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে।
ট্রেসি চ্যাপম্যানের গানের একটি বিশেষ দিক হলো, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে সবসময় আড়ালে রেখেছেন। প্রচারের আলো থেকে দূরে থেকে তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছেছেন।
জাদি স্মিথ মনে করেন, একজন শিল্পী হয়েও কিভাবে প্রচারবিমুখ থাকা যায়, ট্রেসি চ্যাপম্যান তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর গানগুলো আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক, কারণ সমাজের নিপীড়িত মানুষের কথা তিনি সবসময় গেয়ে গেছেন।
ট্রেসি চ্যাপম্যানের প্রথম অ্যালবামটি আবারও নতুন করে বাজারে আসায়, তাঁর গানগুলো নতুন প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে যাবে। তাঁর গানগুলো শুধু একটি সঙ্গীতের অ্যালবাম নয়, বরং একটি প্রতিবাদের ভাষা, যা আজও মানুষকে সাহস জোগায়, সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান