শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় কৃষি গবেষণা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থায়ন হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তায় উদ্বেগে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা বহুলাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং লবণাক্ততার অনুপ্রবেশের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমন পরিস্থিতিতে, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ও জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি গবেষণায় সরকারি অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় গবেষণা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগ কমছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০২ সালের তুলনায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত কৃষি গবেষণায় দেশটির ব্যয় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে, যা প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত গবেষণা প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন স্থগিত বা বন্ধ করে দেওয়ায় এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও পদ্ধতির ওপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে বিজ্ঞানীরা উন্নত জলবায়ু-সহিষ্ণু শস্য উদ্ভাবন, বিদ্যমান ফসলের নতুন ব্যবহার খুঁজে বের করা, শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, উন্নত প্রযুক্তি তৈরি ও কীটপতঙ্গ দমনের কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে পারছেন না।
এর ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা USAID-এর অর্থায়নে পরিচালিত অনেক গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলস্বরূপ, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও কৌশলগুলো কৃষকদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে, চীন কৃষি গবেষণায় ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। তারা ২০০০ সাল থেকে তাদের গবেষণা খাতে বিনিয়োগ পাঁচগুণ বাড়িয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণেরও বেশি।
বেসরকারি খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানও গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগ করছে, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি অর্থায়নের অভাবে গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া কঠিন। বেসরকারি বিনিয়োগ সাধারণত ফলপ্রসূ গবেষণার পেছনেই বেশি আগ্রহী হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে, বিশেষ করে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য সংকট আরও বাড়বে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য ও অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য, এই পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
আমাদের কৃষি ব্যবস্থা এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে। তাই, উন্নত বিশ্বের কৃষি গবেষণায় অর্থায়নের অভাব নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, আমাদের দেশেও কৃষি গবেষণায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়ানো দরকার।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম