বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক মাইলস অল্ডরিজের ক্যামেরার চোখে ধরা পরা নারী, আলো আর ছায়ায় এক ভিন্ন জগৎ। ফিল্মের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ, যা ডিজিটাল যুগের থেকেও আলাদা এক আকর্ষণ সৃষ্টি করে। লন্ডনে সম্প্রতি তাঁর কাজের এক বিশাল প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, যেখানে তাঁর বহু পরিচিত ছবিগুলি দর্শকদের মন জয় করছে।
উত্তর লন্ডনের একটি স্টুডিওতে বসে মাইলস অল্ডরিজ তাঁর ক্যামেরার পেছনের গল্প বলছিলেন। তাঁর স্টুডিওর দেয়ালে সাজানো রয়েছে বিশাল আকারের ছবি, যা তাঁর কাজের এক ঝলক দেখায়। এলটন জন, ডোনাটেলা ভার্সাচি এবং কেট মসের মতো তারকাদের ছবি তোলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
ফিল্মে ছবি তোলার আনন্দ আর অনিশ্চয়তা, যা তাঁকে আজও টানে, সে কথাই বলছিলেন তিনি।
“যখন ফিল্মে কাজ করি, তখন কেবল নিজের চোখের উপর ভরসা রাখতে হয়,”—বলেন অল্ডরিজ। “ফোকাস ঠিক আছে কিনা, নাকি ছবিতে কিছু অর্থবহতা আছে, তা জানার জন্য ফিল্মটি ফেরত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।”
এই অনিশ্চয়তা আমাকে আরও বেশি কঠোর পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করে। ডিজিটাল ফটোগ্রাফির যুগে যেখানে সবকিছু তাৎক্ষণিক, সেখানে ফিল্মের এই ধীর প্রক্রিয়া যেন তাঁর সৃজনশীলতাকে আরও ধারালো করে তোলে।
অল্ডরিজের কাজগুলি আলো, রং এবং কম্পোজিশনের সূক্ষ্মতায় পরিপূর্ণ। তাঁর ছবিতে নারীদের রহস্যময় উপস্থিতি দর্শকদের আকর্ষণ করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া, যিনি ছিলেন ষাটের দশক ও সত্তরের দশকের প্রভাবশালী গ্রাফিক ডিজাইনার।
তাঁর ডিজাইন করা বিখ্যাত অ্যালবাম কভারগুলো আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে।
সদ্য সমাপ্ত হওয়া প্রদর্শনীতে অল্ডরিজের কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে “ক্রোমো থ্রিলার #3” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ছবিতে দেখা যায়, সোনালী চুলের একজন নারী, হাতে হেয়ার ড্রায়ার নিয়ে একটি অন্ধকার বাথরুমে দাঁড়িয়ে আছেন।
ছবিটির রং বিন্যাস ফ্রান্সিস বেকনের চিত্রকর্মের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এছাড়াও, প্রদর্শনীতে “হাহাহা!” শিরোনামের একটি ছবি রয়েছে, যেখানে একজন নারীকে হাসতে দেখা যায়। “ডোরস” নামক সিরিজে নারীদের তাদের বাড়ির দরজার বাইরে আসা যাওয়ার মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে।
অল্ডরিজের কাজে ফ্রেদেরিকো ফেলিনি, ডেভিড লিঞ্চ, কারাভাজ্জিও, রিচার্ড অ্যাভেডন এবং ডায়ান আর্বাসের মতো শিল্পীদের প্রভাব রয়েছে।
আর্ট বিশ্বে, বিশেষ করে ফ্যাশন ফটোগ্রাফিতে, মাইলস অল্ডরিজের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর কাজ শুধুমাত্র একটি ছবি নয়, বরং একটি গল্প, যা দর্শককে নতুন এক জগতে নিয়ে যায়।
সোথেবি’স-এর গ্লোবাল হেড অফ ফটোগ্রাফি এমিলি বিয়ারম্যান মনে করেন, “সামাজিক মাধ্যমে যখন নিখুঁততার একটি চিত্র তৈরি করা হয়, তখন তাঁর কাজ গভীর সত্যকে তুলে ধরে।”
আর্টের এই জগতে, যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তির জয়জয়কার, সেখানেও মাইলস অল্ডরিজ-এর ফিল্মের প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর সৃষ্টিশীলতা, নতুন প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন