নতুন মা হয়ে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর একজন নারীর জীবনে আসে এক নতুন অধ্যায়। মাতৃত্বের আনন্দময় অভিজ্ঞতার মাঝে অনেক সময় নিজের শরীর এবং সৌন্দর্য নিয়ে তৈরি হয় কিছু মানসিক চাপ। সম্প্রতি, এমন একটি সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন একজন নারী, যিনি সবসময় নিজের চেহারা নিয়ে তীব্র সমালোচনার শিকার হন। তিনি জানান, আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখলে তার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়, যা তাকে হতাশ করে তোলে।
এমনকি তিনি ভালোবাসার সঙ্গীকে হারানোর ভয় পান।
এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন একজন বিশেষজ্ঞ, যিনি তার উদ্বেগের কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন। মনোবিজ্ঞানী ফিলিপা (Philippa) মনে করেন, এটি আসলে ভেতরের সমালোচকের কণ্ঠস্বর, যা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, এই সমালোচকের সঙ্গে মোকাবেলা করার কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
প্রথমত, এই সমালোচনামূলক কণ্ঠকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে। ফিলিপা একে একটি কাল্পনিক নাম দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যেমন ‘দুঃখিনী মাসিমা’। এরপর, যখন এই কণ্ঠস্বর কথা বলবে, তখন তার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
যেমন, আপনি বলতে পারেন, ‘আচ্ছা, তুমি আবার এসেছ। আমি তোমার কথা শুনছি, তবে আজ আমি তোমাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।’ এই ধরনের অনুশীলন আপনাকে ধীরে ধীরে নিজের ভেতরের সমালোচকের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে সাহায্য করবে।
দ্বিতীয়ত, নিজের মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিতে হবে। যখনই মনে হবে নেতিবাচক চিন্তাগুলো আপনাকে গ্রাস করছে, তখনই অন্য কিছু করার চেষ্টা করুন।
যেমন, ঘরের চারপাশে শোনা শব্দগুলোর দিকে মনোযোগ দিন, অথবা আপনার পায়ের নিচে মাটির অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। কোনো কিছু আঁকা বা লেখার মাধ্যমেও আপনি আপনার মনকে বিক্ষিপ্ত করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞ আরও মনে করেন, নিজেকে কঠোরভাবে বিচার করার প্রবণতা একাকীত্বের জন্ম দেয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই ধরনের অনুভূতিগুলো খুবই স্বাভাবিক।
প্রত্যেক মানুষ, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে, আত্ম-সন্দেহ এবং শরীরের প্রতি অসন্তুষ্টির মতো বিষয়গুলো আসতে পারে। নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা না ভেবে, বরং মনে করতে হবে, এই অনুভূতিগুলো আমাদের সকলের অভিজ্ঞতারই অংশ।
নিজেকে ভালোবাসতে শেখাটা জরুরি। নিজের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করা, নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নেওয়া—এগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার ভেতরের সমালোচকের কণ্ঠকে শান্ত করতে, কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাদের সঙ্গে নিজের অনুভূতিগুলো ভাগ করে নিলে অনেক হালকা লাগবে।
এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে এবং নিজের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করতে, আপনি Dr. Kristin Neff-এর ওয়েবসাইট self-compassion.org দেখতে পারেন। মনে রাখবেন, নিজের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হওয়া এবং নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নেওয়ার মাধ্যমেই আপনি এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
এই যাত্রা সহজ নাও হতে পারে, তবে ধৈর্য ধরে চেষ্টা করলে, আপনি অবশ্যই আপনার ভেতরের সমালোচককে জয় করতে পারবেন এবং নিজের প্রতি আরও সদয় হতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian