শিরোনাম: সিম সোয়াপ জালিয়াতির শিকার: গ্রাহকের অভিযোগের পরও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি, আলোচনায় ইই
বর্তমান ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মোবাইল ব্যাংকিং থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সবকিছুই এখন মুঠোফোনের মাধ্যমে হাতের মুঠোয়।
এই সুবিধার পাশাপাশি বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকিও। সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যে ইই (EE) নামক একটি মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানির গ্রাহক সিম সোয়াপ জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। আর গ্রাহকের অভিযোগ সত্ত্বেও, কোম্পানিটির প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে চরম গাফিলতি।
ভুক্তভোগী জন নামের একজন গ্রাহক জানান, তাঁর মোবাইলে হঠাৎ করেই একটি এসএমএস আসে, যেখানে তাঁকে জানানো হয় যে তাঁর সিম অ্যাক্টিভেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
অথচ তিনি নিজে এই ধরনের কোনো অনুরোধ করেননি। সাথে সাথে তিনি ইই-এর সাথে যোগাযোগ করেন এবং ঘটনাটি জানান। কিন্তু এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মোবাইল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও উধাও হয়ে যায়।
আসলে, জালিয়াত চক্রটি গ্রাহকের সিম ক্লোন করে তাঁর তথ্য হাতিয়ে নেয়। এর মাধ্যমে তারা ভুক্তভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ইমেইল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এমনকি, তারা গ্রাহকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডও পরিবর্তন করে ফেলে। এর ফলে, ভুক্তভোগী তাঁর ডিজিটাল জগৎ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
সিম সোয়াপ জালিয়াতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে অপরাধীরা মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে ভুক্তভোগীর নম্বরটি তাদের নিজেদের সিম কার্ডে স্থানান্তর করে। এর মাধ্যমে তারা ভুক্তভোগীর সমস্ত এসএমএস এবং ওটিপি (OTP – One-Time Password) গ্রহণ করতে পারে, যা ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার জন্য প্রয়োজনীয়।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের পর ইই কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। তারা জানায়, গ্রাহক এবং জালিয়াত চক্র—উভয়েই একই সময়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন, যা একটি কাকতালীয় ঘটনা।
ইই কর্তৃপক্ষের মতে, গ্রাহক ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ জানানোর আগেই জালিয়াত চক্রটি সিম অ্যাক্টিভেশনের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিল। কোম্পানিটি তাদের গাফিলতির জন্য কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। বরং, তারা গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের জন্য কার্যত তাঁকেই দায়ী করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের জালিয়াতি থেকে বাঁচতে গ্রাহকদের সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন – জন্ম তারিখ, আইডি নম্বর, ইত্যাদি অপরিচিত কারো সাথে শেয়ার করা উচিত নয়।
এছাড়াও, সন্দেহজনক কোনো এসএমএস বা কলের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
বাংলাদেশেও মোবাইল ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটেছে। তাই, সিম সোয়াপ জালিয়াতির ঝুঁকি এখানেও বিদ্যমান। গ্রাহকদের উচিত নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন – শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করা এবং সন্দেহজনক কোনো কার্যকলাপ নজরে আসলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
সিম সোয়াপ জালিয়াতির ঘটনাগুলো মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্রাহক এবং পরিষেবা প্রদানকারী উভয়কেই আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান