ঐশ্বর্যের প্রতীক: টমেটো পাতার সাবান থেকে শুরু করে মেয়োনিজের হ্যান্ডব্যাগ, খাদ্যপণ্যের ফ্যাশন-গুরুত্ব বাড়ছে।
আজকাল বাজারে চোখ রাখলে বা ফ্যাশন দুনিয়ায় উঁকি দিলে একটা ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ে। সাধারণ খাদ্যদ্রব্য, যা একসময় আমাদের হেঁশেলে বা খাদ্যতালিকায় সীমাবদ্ধ ছিল, সেগুলো এখন ফ্যাশন এবং ডিজাইন জগতে আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠছে।
শুনতে অবাক লাগলেও, বিষয়টি এখন বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ধরুন, আপনার রান্নাঘরে রাখা পাস্তার প্যাকেট বা টমেটো সস-এর বোতল। এইসব খাদ্যপণ্যের মোটিফ এখন পোশাক, ব্যাগ বা গৃহসজ্জার সামগ্রীতে দেখা যাচ্ছে। ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাদের ডিজাইন বা পণ্যের প্রচারের জন্য খাদ্য উপাদান ব্যবহার করছে।
এই ধরনের ডিজাইন করা পণ্যগুলির দাম শুনলে হয়তো আপনার চোখ কপালে উঠবে।
যেমন, ল্যুয়ের (Loewe) ব্র্যান্ডের টমেটো পাতার সুগন্ধী সাবানের দাম প্রায় ৯,০০০ টাকা। আবার, ২,৩০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২,৫০,০০০ টাকা) মূল্যের হেলম্যান্স মেয়োনিজের আদলে তৈরি একটি হ্যান্ডব্যাগও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, ভুট্টা গাছের আকারের একটি স্টুল-এর দাম প্রায় ২৬,০০০ টাকা। একটি সাধারণ টি-শার্ট, যেখানে সার্ডিনের ছবি আঁকা, তার দাম ৬,৭০০ টাকার বেশি।
এই প্রবণতা নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই খাদ্য বিষয়ক মোটিফ ফ্যাশন জগতে প্রবেশ করেছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যখন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, তখন এই ধরনের ডিজাইনের কদর যেন আরও বাড়ছে।
খাদ্য এখন শুধু খাওয়ার বস্তু নয়, এটি যেন একটি স্ট্যাটাস সিম্বল বা মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এই পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায়, মিলিনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে “প্রিমিয়াম প্যান্ট্রি” ধারণার জন্ম হয়েছে। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উন্নত সংস্করণ কিনতে আগ্রহী।
যেমন, সাধারণ অলিভ অয়েলের বদলে তারা বেছে নিচ্ছেন বিশেষভাবে তৈরি, আকর্ষণীয় প্যাকেজিং-এর অলিভ অয়েল। এই ধরনের পণ্যের দাম বেশি হলেও, তাদের ডিজাইন ও গুণগত মান অনেক ভালো থাকে।
এই ধারণা এখন ফ্যাশন এবং ডিজাইনের জগতেও প্রভাব ফেলেছে। খাদ্য বিষয়ক মোটিফ ব্যবহার করে তৈরি পোশাক, ব্যাগ এবং অন্যান্য পণ্য তৈরি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পাস্তার প্যাকেট-এর আদলে তৈরি ব্যাগ-এর দাম শুনলে হয়তো অনেকেরই চক্ষু চড়কগাছ হবে।
অথবা, একটি টমেটো আকারের কুশন বা বালিশ-এর দামও বেশ চড়া।
এই ধরনের পণ্যগুলো একদিকে যেমন ফ্যাশন সচেতনতা ফুটিয়ে তোলে, তেমনই এটি অর্থনৈতিক সামর্থ্যেরও প্রতীক। এই ধরনের জিনিস ব্যবহার করে, মানুষ বোঝাতে চায় যে তারা খাদ্য এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সক্ষম।
তারা যেন বলতে চায়, “আমি ভালো মানের খাবার ও জীবনযাত্রার উপকরণ ব্যবহার করতে পারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের এই ফ্যাশন-গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায়, যাদের সেই সামর্থ্য আছে, তারা হয়তো ডিজাইনার ব্যাগ বা পোশাকের মাধ্যমে তাদের রুচি ও আভিজাত্য প্রকাশ করতে চাইবেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন