নরম আলোয় মোড়া নরওয়ের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারে, প্রকৃতির কাছাকাছি বেড়ে ওঠা এক পরিবারের গল্প—যেখানে শোক আর ভালোবাসার এক অদ্ভুত সহাবস্থান। মা-কে হারানোর পর সন্তানদের নিয়ে এক বাবার জীবনযুদ্ধ, আর সেই গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে সাড়া জাগানো এক চলচ্চিত্র।
“আ নিউ কাইন্ড অফ ওয়াইল্ডারনেস” (A New Kind of Wilderness) নামের এই তথ্যচিত্রটি এরই মধ্যে জয় করেছে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবের পুরস্কার।
নর্মান ও মারিয়া পেইনের পরিবারে ছিল প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা। তাঁদের জীবন ছিল প্রকৃতির কাছাকাছি, সাধারণভাবে জীবন কাটানোর এক দারুণ চেষ্টা।
তাঁদের সন্তান—ফ্রেয়া, ফক ও উল্ভ—বাবা নিকের কাছেই শিক্ষা গ্রহণ করত, প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠছিল তারা। মারা যাওয়ার আগে মারিয়া একটি ব্লগ শুরু করেছিলেন, যেখানে তাঁদের জীবনযাত্রার কথা তুলে ধরতেন।
কিন্তু প্রকৃতির এই শান্ত পরিবেশে আঘাত হানে এক কঠিন বাস্তবতা। ২০১৯ সালে মারিয়া ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং অল্প দিনের মধ্যেই তিনি মারা যান।
মারিয়ার মৃত্যুর পর নিক এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন। একদিকে সন্তানদের দেখাশোনা করা, অন্যদিকে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা—সবকিছু সামলে নেওয়াটা সহজ ছিল না।
সেই সময়ে, পরিচালক সিলজে ইভেন্সমো জ্যাকবসেন এই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁদের জীবনের এই কঠিন মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করেন।
ছবিটি তৈরির সময় নিক চেয়েছিলেন, মারিয়ার আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখতে। মারিয়া সবসময় বলতেন, ভেতরের কাজটা চালিয়ে যেতে। তাই, তিনি রাজি হন, হয়তো এর মাধ্যমে অন্য কেউ সাহস পাবে।
ছবিতে, নিককে দেখা যায়, সন্তানদের জন্য খাবার তৈরি করছেন, তাদের চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন, এমনকি নিজের সীমিত নরওয়েজিয়ান ভাষায় তাদের পড়াচ্ছেনও।
অন্যদিকে সংসারের খরচ যোগানো, অন্যদিকে সন্তানদের দেখাশোনা করা—সবকিছু সামলাতে গিয়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। একসময় সন্তানদের স্কুলে পাঠানো ছাড়া তাঁর উপায় ছিল না।
শুরুর দিকে, ফ্রেয়া, ফক ও উল্ভ—এই তিন সন্তানের জীবন ছিল প্রকৃতির কাছাকাছি। তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে মানুষ হয়েছিল।
কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর তাদের জীবনে আসে পরিবর্তন। একসময় তাদের স্কুলে যেতে হয়।
ছবিতে, তাদের জীবনের এই কঠিন পরিবর্তনগুলো খুবই স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একদিকে যেমন তারা মায়ের অভাব অনুভব করে, তেমনই তারা নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
নিকের একাকিত্বও ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর একজন মানুষ কতটা একা হয়ে যেতে পারে, তা এই ছবিতে দারুণভাবে চিত্রিত হয়েছে।
ছবিটি ইতোমধ্যে সানডান্স চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতেছে। বর্তমানে ছবিটি বিভিন্ন দেশে মুক্তি পাচ্ছে এবং প্রশংসিত হচ্ছে।
নিক জানিয়েছেন, ছবিটি বানানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল, মারিয়ার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা। তিনি চান, এই ছবি দেখে অন্য কেউ যেন সাহস পায়, শোকের সঙ্গে লড়াই করতে শেখে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান