স্টাফ রিপোর্টার।
ঢাকা, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪:
নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হননি, নওগাঁর পত্নীতলায় সেই সাংবাদিক মাহমুদুন নবীর বিরুদ্ধে এবার পরিকল্পিত ভাবে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়েছে ক্লিনিক মলিক সমিতি। অথচ নির্যাতনের শিকার মাহমুদুন নবীর পরিবারের অভিযোগ আমলে নেয়নি পুলিশ। পুলিশের এমন কান্ডজ্ঞানহীন আচরণে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা।
এদিকে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। বুধবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর বলেন, সাংবাদিকের সাথে চরম অন্যায় করা হয়েছে। আমরা যেকোন মূল্যে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার জন্য যা করনীয় তা করবো। ঘটনাটি পর্যবেক্ষনের জন্য বিএমএসএফ’র পক্ষ থেকে একটি টিম নওগাঁতে পাঠাবেন বলেও জানান তিনি।
জানাগেছে, পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর সিটি ক্লিনিকে অতি সম্প্রতি এক প্রসূতির সিজার অপারেশন করেন মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার দেওয়ান সবুর হোসেন। কিন্তু ভূল অপারেশনের অভিযোগ উঠে প্রসূতির পরিবার থেকে। এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক দৈনিক জয়পুরহাট খবর পত্রিকার প্রতিনিধি মাহমুদুন নবী সংবাদ প্রকাশ করেন।
এছাড়া স্থানীয় ক্লিনিক ডায়াগনোষ্টিকে অব্যবস্থাপনা, অপ-চিকিৎসা ও চিকিৎসকের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন মাহমুদুন নবী ও দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম নামে অপর এক সাংবাদিক।
অনিয়মের এসব সংবাদ প্রকাশের জেরে গত ৭ সেপ্টেম্বর মাহমুদুন নবী ও রবিউলকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায় ডাক্তার দেওয়ান সবুর হোসেনসহ ক্লিনিক ডায়াগনোষ্টিকের ভাড়াটে বাহিনী। সিটি ক্লিনিকের ভেতরে আটকে রেখে মারপিট করে তাদের উপর অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যয়ে মাহমুদুন নবীর গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নির্যাতনকারীরা। পরে তা ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকরা দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন। কিন্তু সেই অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় নিরাপত্তা দিয়ে সাংবাদিকদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনার পর থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাহমুদুন নবী। লোক লজ্জায় তারা কেউ বাইরে বেড় হচ্ছেন না।
এদিকে, নির্যাতনের ঘটনায় বাদি হয়ে ৯ সেপ্টেম্বর মাহমুদুন নবীর ভাই নূরনবী পত্নীতলায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ সেই মামলা গ্রহণ করেনি। বিপরীতে ক্লিনিক ডায়াগনষ্টিক মালিকরা পুলিশের সাথে যোগসাজস করে ঘটনার ৩ দিন পর চাঁদাবাজির একটি সাজানো মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় পত্নীতলা উপজেলার বেশ কিছু ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক থেকে কয়েক লাখ টাকার চাঁদা নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে মাহমুদুন নবীর বিরুদ্ধে। এসব ঘটনার পর স্থানীয় সাংবাদিক মহলে চরম ক্ষোভ তৈরী হয়েছে।
ন্যায় বিচারের প্রার্থনায় আদালতে মামলা করবেন জানিয়ে নির্যাতনের শিকার মাহমুদুন নবী বলেন, ক্লিনিক ডায়াগনোষ্টিক সমিতির নেতারা প্রবাবশালী। রাজনৈতিক সুযোগ সন্ধানী। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। ঘটনা মিমাংসা করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পত্নীতলা থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ক্লিনিক ডায়াগনষ্টিক সমিতির লোকজন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে নিয়ে থানায় এজাহার দিতে এসেছিলেন। তাই তাদের অভিযোগ এজাহারভূক্ত করা হয়েছে। যথাযথ ভাবে অভিযোগ করলে মাহমুদুন নবীর অভিযোগ আমলে নেয়া হবে।