একটি অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত: লেখকের চোখে বয়স এবং সমাজের চাপ
সমাজের চোখে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন বদলে যায়, সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন খ্যাতিমান লেখিকা ক্যাথি লেট। তাঁর নিজের জীবনের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তিনি, যা আসলে সমাজের এই দ্বিচারিতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
একদিন তিনি লক্ষ্য করেন, তাঁর শরীরে প্রথম পাকা চুলটি দেখা দিয়েছে। এই ঘটনাটি তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি অনুভব করেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের শরীরের গঠন, সৌন্দর্য এবং পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে সমাজের প্রত্যাশাগুলো যেন আরও কঠিন হয়ে ওঠে।
একদিকে যেখানে পুরুষের বয়স বাড়লে তাকে অভিজ্ঞ এবং পরিণত হিসেবে দেখা হয়, সেখানে নারীদের ক্ষেত্রে যেন সবকিছু উল্টো। তাঁদের সবসময় তরুণ এবং আকর্ষণীয় থাকার জন্য এক ধরনের অদৃশ্য চাপ অনুভব করতে হয়।
ক্যাথি লেট তাঁর একটি উপন্যাসের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, যেখানে পোশাকের একটি বিশেষ থিম ছিল— “যেন হত্যা করার মতো সাজ”। তিনি যখন পোশাকটি পরছিলেন, তখনই তাঁর চোখে পরে সেই অপ্রত্যাশিত দৃশ্য। এর পরেই তাঁর মনে হয়, সমাজের এই সৌন্দর্য-সংক্রান্ত ধারণাগুলো কতটা চাপ সৃষ্টি করে।
তাঁর মনে হতে থাকে, শরীরের ভাঁজ, ত্বক, এবং অন্যান্য পরিবর্তনগুলো নিয়ে উদ্বেগে থাকতে হবে, যা সম্ভবত একজন পুরুষের ক্ষেত্রে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তিনি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেন এবং জানতে পারেন, তাঁদেরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি যখন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেন, তখন বুঝতে পারেন, সমাজের এই চাপগুলো আসলে নারীদের জীবনে কতটা গভীর প্রভাব ফেলে।
তিনি উপলব্ধি করেন, এই সমাজে নারীদের বয়সকে একটি সমস্যার মতো করে দেখা হয়।
লেখিকা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেন, মাঝ বয়সী নারীদের নিয়ে গল্প লিখতে গেলে প্রকাশকরা অনেক সময় আগ্রহ দেখান না। তাঁদের মতে, এই ধরনের বিষয়গুলো নাকি পাঠকদের কাছে আকর্ষণীয় নয়।
তবে তিনি এর প্রতিবাদ করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন, সঠিক গল্প বলার মাধ্যমে যেকোনো বিষয়ই পাঠকের কাছে তুলে ধরা সম্ভব। তাঁর লেখা একটি বই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা প্রমাণ করে, বয়স্ক নারীদের নিয়ে লেখালেখিকে অবজ্ঞা করার কোনো কারণ নেই।
ক্যাথি লেট মনে করেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আত্ম-উপলব্ধি বাড়ে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে তিনি নিজের শরীর এবং সত্তাকে ভালোবাসতে শিখেছেন। তাঁর মতে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে অন্যের কথা চিন্তা না করে নিজের মতো করে বাঁচতে পারাটাই আসল।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান