শিরোনাম: ধনী ব্যক্তিদের দৌরাত্ম্য নাকি নতুন দিগন্ত? লন্ডনের ক্লাব সংস্কৃতিতে অর্থবানদের প্রভাব
লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লাব সংস্কৃতি, যেখানে গভীর রাতে সঙ্গীতের তালে মুখরিত হয় তরুণ-তরুণীর দল, সেখানে এখন এক নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। এই সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রগুলোতে ধনী ব্যক্তিদের আগমন কি একে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, নাকি তারা নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে? বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা।
একদিকে, কিছু মানুষের অভিযোগ, সমাজের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানরা, যাদের প্রায়ই ‘নেপো বেবি’ বা পারিবারিক সূত্রে সুবিধা পাওয়া ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তারা এই সংস্কৃতিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে। তাদের বিপুল অর্থ থাকার কারণে, তারা বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে জনপ্রিয় ডিজেদের নিয়ে আসে, যা ছোট ক্লাবগুলোর জন্য টিকে থাকা কঠিন করে তোলে।
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, এই ধনী ব্যক্তিদের বিনিয়োগ আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লাব সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। তাদের আর্থিক সহায়তা নতুন ধরনের অনুষ্ঠান তৈরি করতে, শিল্পীদের সমর্থন যোগাতে এবং আরও পরীক্ষামূলক কাজ করতে সাহায্য করতে পারে।
লন্ডনের একটি পরিচিত ক্লাব ‘ভেন্যু মট’ (Venue MOT)। এটি শুরুতে একটি গ্যারেজ ছিল, যা এখন আন্ডারগ্রাউন্ড সংগীতের কেন্দ্রবিন্দু। ক্লাবটির মালিক, শিল্পী জন মোহামেদ, প্রতি মঙ্গলবার কর্মীদের সঙ্গে বসে গত সপ্তাহের ক্ষতির হিসাব করেন।
তাঁর মতে, এই ব্যবসা অনেকটা ‘হাস্যকর’। কিন্তু তারপরও, ক্লাবটি চলছে এবং প্রশংসিত হচ্ছে। সম্প্রতি টাইম আউট ম্যাগাজিন এটিকে লন্ডনের সেরা নাইটক্লাব হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তবে, এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক কঠিন বাস্তবতা। ক্লাবগুলো টিকে থাকার জন্য লাইসেন্সিং সংক্রান্ত নিয়মকানুন এবং শহরের উন্নয়নের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে। এই পরিস্থিতিতে, যারা ব্যক্তিগত অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে, তাদের সুবিধা অনেক।
এই বিতর্কের একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হলেন অলি অ্যাশলি। তিনি বিলিয়নেয়ার স্পোর্টস ডিরেক্ট-এর মালিক মাইক অ্যাশলির ছেলে। অলি একসময় ‘রাডার রেডিও’ নামে একটি অনলাইন রেডিও স্টেশন চালাতেন, যা নানা অভিযোগের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
তবে, তিনি এখন ‘ভাইরাস’ নামে একটি নতুন ক্লাব নাইট শুরু করেছেন।
আরেকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন ম্যাগনাস রাউসিং, যিনি ‘টেট্রা প্যাক’-এর উত্তরাধিকারী। তিনি ‘ফিগিউরা’ নামের একটি প্রকল্পের অর্থ জোগান দেন।
এই ধরনের ঘটনাগুলো ক্লাব সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। ডিজে এবং প্রযোজক রব ভেনিং-এর মতে, বেশি টাকা আসলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা পুরো সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তবে, অনেকে মনে করেন, এই ধনী ব্যক্তিদের সমর্থন কিছু ইতিবাচক দিকও নিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ, অলি অ্যাশলি তাঁর স্টুডিওগুলি শিল্পীদের জন্য বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দেন। এর মাধ্যমে তিনি অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে কাজ করতে পারেন।
অন্যদিকে, ‘হ্যান্ডসন ফ্যামিলি’ নামের একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে বিনামূল্যে অনুষ্ঠান করে আসছে। তাদের এই কাজের জন্য অর্থ জোগান দেন একজন সম্পত্তি ব্যবসায়ী। এই ধরনের সহযোগিতা সংস্কৃতিতে নতুনত্ব আনতে সাহায্য করে।
তবে, সব কিছুই এত সহজ নয়। ছোট ক্লাব এবং উদ্যোক্তারা আর্থিক সীমাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করেন। তাদের টিকে থাকার জন্য নিজেদের পকেট থেকে টাকা খরচ করতে হয়।
এই বিতর্কের মূল প্রশ্ন হলো, এই ধনী ব্যক্তিরা কি সত্যিই আন্ডারগ্রাউন্ড সংস্কৃতির উন্নতি ঘটাচ্ছেন, নাকি তারা নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য এই ক্ষেত্রটি ব্যবহার করছেন? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো সময়ের সঙ্গে আরও স্পষ্ট হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান