ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসা সারাহ ফার্গুসন, যিনি ডাচেস অফ ইয়র্ক হিসেবেও পরিচিত, সম্প্রতি তাঁর কঠিন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। ক্যান্সারের সঙ্গে তাঁর লড়াই, বিশেষ করে অল্পবয়সী ক্যান্সার রোগীদের প্রতি সমর্থন জানানো নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।
ব্রিটেনের এই রাজ পরিবারের সদস্য জানিয়েছেন, ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তাঁর মনে হয়েছিল যেন ‘মৃত্যুর পরোয়ানা’ হাতে পেয়েছেন।
২০২৩ সালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন সারাহ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা হয়।
এর ছয় মাস পরেই, অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, তাঁর শরীরে মেলানোমা, যা এক ধরনের ত্বকের ক্যান্সার, ধরা পরে। ক্যান্সারের সঙ্গে তাঁর এই লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা, তরুণ প্রজন্মের ক্যান্সার রোগীদের প্রতি তাঁর সমর্থন এবং তাঁদের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তিনি কথা বলেছেন।
সারাহ ফার্গুসন, যিনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে ‘টিনএজ ক্যান্সার ট্রাস্ট’-এর পৃষ্ঠপোষক, এই সংস্থার হয়ে একটি নিবন্ধও লিখেছেন।
তাঁর দুই মেয়ে, প্রিন্সেস বিয়াট্রিস এবং প্রিন্সেস ইউজেনিও মায়ের পথ অনুসরণ করে বর্তমানে এই দাতব্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
৬৩ বছর বয়সে প্রথমবার ক্যান্সার ধরা পড়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সারাহ বলেন, “যেকোনো বয়সেই ক্যান্সার একটি ট্রমা বা আঘাতস্বরূপ।
তবে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমাদের জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং মানসিক পরিপক্কতা থাকে যা আমাদের নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে এবং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা সাহায্য চাইতে পারি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের কথাগুলো অনেক সময় গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হয়।”
ডাচেস অফ ইয়র্ক বিশেষভাবে ‘টিনএজ ক্যান্সার ট্রাস্ট’-এর ‘#AndYoungPeople’ প্রচার অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
আগামী ২৩শে এপ্রিল তিনি তাঁর দুই মেয়ের সঙ্গে লন্ডনের একটি কেন্দ্রে ক্যান্সার আক্রান্ত তরুণদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সারাহ বলেন, “আমার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, ক্যান্সার আক্রান্ত সেই সব মানুষের কথা সমাজের সামনে তুলে ধরা হোক, যাদের কথা সাধারণত শোনা হয় না এবং যাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয় না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিকল্পনা এবং নীতি তৈরি করার সময়, ক্যান্সার আক্রান্ত তরুণ এবং যুবকদের প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়।
এর ফল অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে।”
তরুণ ক্যান্সার রোগীদের জন্য উপলব্ধ সুযোগ-সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “চিকিৎসা বিষয়ক ট্রায়ালে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সব বয়সের রোগীদের সমস্যা হয়, তবে তরুণদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে কঠিন।
কারণ, তাদের মধ্যে বিরল ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে অথবা তারা হয় শিশু বিষয়ক ট্রায়ালের জন্য বয়স্ক, না হয় প্রাপ্তবয়স্ক বিষয়ক ট্রায়ালের জন্য যথেষ্ট তরুণ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে হবে এবং আরও বেশি তরুণদের জীবন বাঁচাতে হবে।”
মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একটি ট্রাস্টের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ মনোবিদ মনে করেন, জাতীয় পর্যায়ে তরুণ এবং যুব ক্যান্সার রোগীদের চাহিদা পূরণ করার মতো ব্যবস্থা নেই।
তাঁদের কথা সমাজের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের প্রতি নজর রাখা আমাদের কর্তব্য।”
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক ক্লাইমেট উইকে ‘ইউথ ইমপ্যাক্ট কাউন্সিল’ উদ্বোধনের সময় সারাহ ফার্গুসন তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আমার মনে হয়, স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।
মেলানোমার ক্ষেত্রেও, আপনি কখনোই নিশ্চিত হতে পারেন না যে, এটি আবার ফিরে আসবে না।
সবকিছু নিরীক্ষণ করতে হয় এবং আপনি আরও বেশি সচেতন হয়ে ওঠেন।
স্তন অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এবং এরপর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো—এগুলো খুবই কঠিন।”
ডাচেস অফ ইয়র্ক আরও যোগ করেন, “আমার মনে হয়, এটি আমাকে মনের দুর্বলতা বুঝতে সাহায্য করে।
অনেক তরুণ-তরুণী সাইবার বুলিং এবং অন্যদের নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়ে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরে।
সামাজিক মাধ্যমে হওয়া এই ধরনের নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে আমি সচেতন এবং এর বিরুদ্ধে আমি সবসময় সোচ্চার।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আমার স্বাস্থ্য ভালো আছে, তবে আমাদের আরও সচেতন থাকতে হবে এবং নিজেকে বেশি চাপ দেওয়া উচিত না, যা আমি করি।”
তথ্য সূত্র: পিপল