ফিলিপাইনের একটি বেকারি মালিককে তার জন্মদিনের পার্টির পর সাতজন সহকর্মীকে ঘুমের মধ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খবর সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিহতদের তার বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা শোনার পরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
স্থানীয় সময় অনুযায়ী, গত ২২শে এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ফিলিপাইনের রিজাল প্রদেশের অ্যান্টিপোলো সিটির বারানগে কাপাং-এর একটি বেকারি থেকে “ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের” খবর পাওয়া যায়। রিজাল পুলিশ প্রাদেশিক কার্যালয় (Rizal Police Provincial Office) ফেসবুকের মাধ্যমে জানায়, খবর পাওয়ার পরেই তারা ঘটনাস্থলে যায়।
পুলিশের ভাষ্যমতে, “ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর, বেকারির ভেতরে সাতজন পুরুষের নিথর দেহ পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিহত সবাই ‘জে অ্যান্ড বি মালুংগে বেকারি’র কর্মচারী ছিলেন এবং সেখানেই থাকতেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম বোগার্ট রামিরেজ (Bogart Ramirez), বয়স ৩২ বছর। তিনি তার সহকর্মীদের হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press) সূত্রে জানা গেছে, রামিরেজ দাবি করেছেন যে তিনি তার সহকর্মীদের নিজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে শুনেছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রামিরেজ তার জন্মদিনের পার্টিতে নিহতদের অ্যালকোহল পান করতে দেন, “তারপর একে একে ছুরি দিয়ে তাদের হত্যা করেন, যখন তারা মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।
খবর অনুযায়ী, এক প্রতিবেশী সাহায্যের জন্য চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়।
২২শে এপ্রিলের ফেসবুক পোস্টে অভিযুক্তের নাম উল্লেখ না করে রিজাল পুলিশ প্রাদেশিক কার্যালয় জানায়, “একই দিন সকাল ৯টার দিকে সন্দেহভাজনকে ফিলিপাইন ন্যাশনাল পুলিশের (PNP) সদর দপ্তর সাপোর্ট সার্ভিসে আটক করা হয়।
“তাকে শারীরিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন,” মঙ্গলবার প্রকাশিত পোস্টে আরও বলা হয়।
“এই জঘন্য অপরাধের পেছনের উদ্দেশ্য এখনো তদন্তাধীন। কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখছে, যার মধ্যে অতিরিক্ত সন্দেহভাজনদের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে,” পুলিশ জানায়।
এপি’র মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশ হেফাজতে বলেছেন, “আমার আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। শহর ছাড়লে তারা আমাকে ধরবেই। বেকারি ত্যাগ করার পর আমি ফিলিপাইন ন্যাশনাল পুলিশ সদর দপ্তরে যাই।
সংবাদ সংস্থাটির বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমি তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে শুনি, যেন আমার স্ত্রী পরের দিন এসে মনে করে আমি দুঃস্বপ্ন দেখে মারা গেছি।
“আমরা দু’জন বেকারির অংশীদার, আর বাকি শ্রমিকরা তার আত্মীয়। তারা আমার বিরুদ্ধে জোট বাঁধার চেষ্টা করছিল। আমি মারা গেলে পুরো ব্যবসা তাদের হয়ে যাবে, তাই আমিই আগে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,” – অভিযুক্ত আরও যোগ করেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ফিলিপাইন স্টার’-এর (The Philippine Star) খবর অনুযায়ী, “নিহতদের মধ্যে দুজন ছিল নাবালক এবং বাকিদের বয়স ২১ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে এমন আরও ব্যক্তির সন্ধান চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় পুলিশ কর্নেল ফেলিপে মারাগুন বলেছেন, “আমরা মনে করি না যে সে একাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তার কোনো সহযোগী থাকতে পারে এবং আমরা সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমরা তার দেওয়া ঘটনার বিবরণে সন্তুষ্ট নই, তবে আমরা সংগ্রহ করা প্রমাণগুলো যাচাই করব।
রিজাল পুলিশ পরিচালক মারাগুন জানিয়েছেন, ঘটনার আগের দিন জন্মদিন পালন করা ওই সন্দেহভাজককে এক বোতল জিন দেওয়া হয়েছিল, যা নিহত ব্যক্তিরা পান করেছিলেন।
কর্মকর্তা জানান, “আমরা তরলটিতে কোনো মাদক মেশানো ছিল কিনা, তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছি।
তথ্যসূত্র: পিপলস