নীল আর্মস্ট্রং: চাঁদে প্রথম পা রাখা মানুষ, আর তাঁর সন্তানদের জীবন
নীল আর্মস্ট্রং, যিনি চাঁদে প্রথম হেঁটেছিলেন, তাঁর কীর্তি বিশ্বজুড়ে আজও স্মরণীয়। কিন্তু এই খ্যাতিমান মানুষটির পরিবারের সদস্যদের জীবন কেমন ছিল?
তাঁর সন্তান, মার্ক ও রিক-এর কথা আজ আমরা জানব, সেই সঙ্গে প্রয়াত কন্যা কারেনের কথাও।
নীল আর্মস্ট্রং এবং তাঁর স্ত্রী জেনেট শ্যারন আর্মস্ট্রং-এর বিবাহিত জীবন ছিল প্রায় ৩৮ বছরের। তাঁদের তিনটি সন্তান ছিল: মার্ক, রিক এবং কন্যা কারেন।
তাঁদের দাম্পত্য জীবনের শুরুতে, ১৯৫৬ সালে জেনেটের একটি গর্ভপাত হয়। এরপর ১৯৬২ সালে, মাত্র দুই বছর বয়সে কারেন নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি পরিবারটিকে গভীরভাবে শোকের মধ্যে ফেলে দেয়, বিশেষ করে নীল আর্মস্ট্রংকে। কন্যার মৃত্যুর কয়েক মাস পরেই তিনি মহাকাশচারী হওয়ার জন্য নাম লেখান। অনেকের মতে, মেয়ের মৃত্যু নীল আর্মস্ট্রংকে আরও বেশি করে তাঁর কাজের প্রতি মনোযোগী করে তুলেছিল।
রিক আর্মস্ট্রং, নীল এবং জেনেটের বড় ছেলে, ১৯৫৭ সালের ৩০শে জুন ক্যালিফোর্নিয়ার ল্যাঙ্কাস্টারে জন্মগ্রহণ করেন।
ছোটবেলায় মা এবং বোন কারেনের সঙ্গে পার্কে ঘুরতে যাওয়া ছিল তাঁর প্রিয় একটি অভ্যাস। বাবা নীল আর্মস্ট্রং যখন চাঁদে পা রাখেন, তখন রিকের বয়স ছিল ১২ বছর।
তিনি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালে বসে বাবার সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন। রিক জানান, “আমি হয়তো বিষয়টিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বুঝি, কিন্তু আমার মনে হয়, আমি হয়তো কখনোই পুরোটা অনুভব করতে পারব না।
তিনি ছিলেন আমার বাবা, ব্যাস এটুকুই।” বর্তমানে রিক একজন ফ্রিল্যান্স সফটওয়্যার ডেভলপার এবং পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন।
তিনি ‘অ্যাস্ট্রোনট স্কলারশিপ ফাউন্ডেশন’-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও কাজ করেন, যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে।
কারেন অ্যান আর্মস্ট্রং, নীল ও জেনেটের একমাত্র কন্যা, ১৯৫৯ সালের ১৩ই এপ্রিল ল্যাঙ্কাস্টারে জন্মগ্রহণ করেন।
নীল তাঁর মেয়েকে “মাফি” বলে ডাকতেন এবং খুবই ভালোবাসতেন। ১৯৬১ সালে কারেন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন।
এরপর দীর্ঘ চিকিৎসার পরও ১৯৬২ সালের ২৮শে জানুয়ারি, তাঁর ষষ্ঠ বিবাহবার্ষিকীতে তিনি মারা যান। কন্যার মৃত্যু নীল আর্মস্ট্রংয়ের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
মার্ক স্টিফেন আর্মস্ট্রং, নীল ও জেনেটের ছোট ছেলে, ১৯৬৩ সালের ৮ই এপ্রিল টেক্সাসের হিউস্টনে জন্মগ্রহণ করেন।
বাবার চাঁদে হাঁটার সেই ঐতিহাসিক দৃশ্যটি তাঁর আজও মনে আছে। তিনি জানান, “বিষয়টি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।”
মার্ক ১৯৮৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি সিনসিনাটির আইনজীবী ওয়েন্ডি আর্মস্ট্রংকে বিবাহ করেছেন।
নীল আর্মস্ট্রংয়ের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেরা বাবার স্মৃতিচিহ্ন নিলামে তোলেন। তাঁদের সংগ্রহ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিলাম থেকে প্রায় ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার বেশি) আয় হয়েছিল, যেখানে তাঁর শৈশবের টেডি বিয়ার, এমনকি একটি প্রি-স্কুলের রিপোর্ট কার্ডও ছিল।
নীল আর্মস্ট্রংয়ের মৃত্যুর কারণ নিয়ে হাসপাতালে একটি মামলা হয়েছিল, যেখানে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৬ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩ কোটি টাকার বেশি) তাঁর সন্তানদের দেওয়া হয়।
নীল আর্মস্ট্রং শুধু একজন মহাকাশচারী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বাবাও। তাঁর জীবনের এই দিকটি, তাঁর সন্তানদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, আমাদের সকলের জন্য অনুকরণীয়।
তথ্য সূত্র: পিপল