মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে এক প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তার বিচার শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত ক্রিস্টোফার শুর নামের ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২৬ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক প্যাট্রিক লয়োয়ারকে গুলি করে হত্যা করেছেন। লয়োয়া ছিলেন কঙ্গো থেকে আসা একজন অভিবাসী, যিনি নিজের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
খবরটি দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে, যা জাতিগত বিদ্বেষ এবং পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসের এক বৃষ্টিভেজা সকালে গ্র্যান্ড র্যাপিড্স শহরে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগে লয়োয়ার গাড়ি থামালে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। পুলিশের বডি ক্যামেরার ফুটেজ ও ড্যাশবোর্ড ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, লাইসেন্স দেখাতে বলার পরেই লয়োয়া দৌড় দেন।
শুর তখন লয়োয়ারকে ধরে ফেলেন এবং তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। শুর লয়োয়ারকে একটি টেইজার (বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার অস্ত্র) দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, লয়োয়া সম্ভবত অফিসারের টেইজারটি ধরে ফেলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই, শুর তার বন্দুক বের করে মাটিতে উপুড় হয়ে থাকা লয়োয়ারের মাথার পেছনে গুলি করেন।
এই ঘটনায় শুরের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
লয়োয়ার পরিবার জানায়, তিনি কঙ্গোতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে চলা সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। গ্র্যান্ড র্যাপিড্স শহরে তিনি তার দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন। লয়োয়ারের মৃত্যু, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে নিহত হওয়া অভিবাসী কৃষ্ণাঙ্গদের দীর্ঘ তালিকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
এর আগে, বোথাম জীন, আমাদু ডায়ালো এবং অ্যাবনার লুইমার মতো আরও অনেকের মৃত্যু জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়িয়েছে।
এই মামলার শুনানিতে টেইজারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। প্রসিকিউটররা বলছেন, টেইজার ব্যবহারের পরেও শুর কেন প্রাণঘাতী অস্ত্রের আশ্রয় নিলেন, তা পরিষ্কার নয়।
অন্যদিকে, শুরের আইনজীবীরা বলছেন, আত্মরক্ষার জন্যই তিনি গুলি করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এই মামলার রায় শোনানোর আগে, বিচারক এবং আইনজীবীদের সামনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, শুর লয়োয়ারকে আত্মরক্ষার কোনো সুযোগ দিয়েছিলেন কিনা এবং টেইজার ব্যবহার করার পরেও কেন তিনি গুলি চালালেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা মানবাধিকার এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। লয়োয়ারের মৃত্যুর ঘটনা, সেখানকার পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে এনেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন