হলিউডের আলো ঝলমলে দুনিয়ায় মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আলো ঝলকানির আড়ালে থাকা গভীর ক্ষতগুলো উন্মোচন করে দেয়। ২০২১ সালের অক্টোবরে এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয় চলচ্চিত্র জগৎ।
পশ্চিমের ঘরানার ছবি ‘রাস্ট’-এর শুটিং চলাকালীন সময়ে অভিনেতা অ্যালেক বাল্ডউইনের হাতে থাকা বন্দুক থেকে অসাবধানতাবশত গুলি চলে, আর সেই গুলিতে প্রাণ হারান সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফার (চিত্রগ্রাহক) হ্যালিনা হাচিন্স। গুরুতর আহত হন পরিচালক জোয়েল সুজা।
ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেজেন্টনে নিজের বাড়িতে বসে ৫২ বছর বয়সী জোয়েল সুজা সেই ভয়াবহ দিনের স্মৃতিচারণ করেন।
বন্দুকের প্রতি বরাবরই তার এক ধরনের অনীহা ছিল। তিনি জানান, “আমি বন্দুকের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত নই।
বন্দুক দেখলে আমার গা ঘিন ঘিন করে। সেটি ধরতেও ভালো লাগে না।
দুর্ঘটনার পর শোকের আবহ তৈরি হয়, চলে আসে দোষারোপের পালা।
ঘটনার তদন্তে জানা যায়, বন্দুকটিতে আসল বুলেট ছিল, যা থাকার কথা ছিল না।
এই ঘটনায় সিনেমার প্রোডাকশন টিমের গাফিলতি ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও হ্যালিনার পরিবারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসেন অ্যালেক বাল্ডউইন।
দুর্ঘটনার কয়েক মাস পর, পরিচালক সুজা আবার ফিরে আসেন ‘রাস্ট’-এর শুটিংয়ে।
হ্যালিনার পরিবার চেয়েছিল, সিনেমাটি যেন কোনোভাবে শেষ করা হয়।
সুজা জানান, প্রথমে তিনি রাজি ছিলেন না, কিন্তু পরে তিনি অনুভব করেন, অন্য কেউ এই কাজটি করলে তার ভালো লাগবে না।
তাই, সব বাধা পেরিয়ে তিনি আবার ক্যামেরার পেছনে দাঁড়ান।
শুটিংয়ের সময় অভিনেতা অ্যালেক বাল্ডউইনের সঙ্গে চরিত্রের গভীরতা নিয়ে মতবিরোধ হয়েছিল সুজার।
কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন, এবার যেন সবাই তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে।
সুজা বলেন, “আমি কারো ঘাড়ে পা তুলে দাঁড়াইনি, তবে কিছু বিষয়ে আপস করার সুযোগ ছিল না।
কোনোমতে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেয়েছিলাম।”
আহত হওয়ার পর শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে তিনি বিপর্যস্ত ছিলেন।
শুটিংয়ের পুরো সময়টা ক্রু মেম্বার এবং পরিবারের সদস্যরা তাকে সাহস যুগিয়েছেন।
এই দুর্ঘটনার আড়াই বছর পর অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ‘রাস্ট’।
সিনেমাটি হ্যালিনার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে।
সুজা জানান, হ্যালিনার পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী, সিনেমার ক্রেডিটসে তার নাম পরিচালকের পরেই রাখা হয়েছে।
যা সাধারণত সিনেমাটোগ্রাফারের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
সিনেমাটিতে হ্যালিনার কাজের প্রশংসা করে সুজা বলেন, “একজন নারী সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে হ্যালিনার কাজ সত্যিই অসাধারণ ছিল।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে খারাপ সিদ্ধান্ত এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন সুজা।
তিনি বলেন, “আমি চাইতাম, এই সিনেমাটাই যেন কখনো না লেখা হত।”
বর্তমানে সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান