হলিউডের জনপ্রিয় নাট্যকার কেন লুডউইগ: এবার আগাথা ক্রিস্টির রহস্যের জাদুকর।
বিশ্বখ্যাত লেখকদের নাটকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হওয়া কয়েকটি নামের মধ্যে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবার এবং অ্যাগাথা ক্রিস্টির নাম উল্লেখযোগ্য। এই তালিকায় চতুর্থ একটি নামও বেশ পরিচিত, তিনি হলেন কেন লুডউইগ।
বিশেষ করে, রহস্য উপন্যাস ও ক্লাসিক সাহিত্য নিয়ে কাজ করা এই আমেরিকান নাট্যকারের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি, তিনি আগাথা ক্রিস্টির জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করেছেন নতুন নাটক, যা দর্শকদের মন জয় করেছে।
কেন লুডউইগের সাফল্যের শুরুটা হয় ১৯৮৬ সালে, তাঁর কমেডি নাটক ‘লেন্ড মি আ টেনর’-এর মাধ্যমে। এরপর তিনি একে একে মঞ্চের জন্য জনপ্রিয় সব ক্লাসিক গল্প ও উপন্যাস নির্বাচন করতে থাকেন।
এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি কাজ হলো, ২০১৭ সালে ক্রিস্টির ‘মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’-এর নাট্যরূপ। বর্তমানে এটি যুক্তরাজ্যে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে।
আগাথা ক্রিস্টির কাজের প্রতি কেন লুডউইগের আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, লেখকের নাতি ম্যাথিউ প্রিচার্ডের কাছ থেকে তিনি প্রথম এই প্রস্তাব পান।
প্রিচার্ড জানান, বহু বছর পর তাঁরা ক্রিস্টির কোনো উপন্যাসকে মঞ্চে রূপ দিতে চান এবং লুডউইগ তাঁর পছন্দের একটি বেছে নিতে পারেন। লুডউইগ জানান, তিনি ‘মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’ নির্বাচন করেছিলেন, কারণ এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল এবং তাঁর ধারণা ছিল, বেশি সংখ্যক দর্শক এটি দেখতে চাইবেন।
নাটকটি তৈরির সময় মূল উপন্যাসের বিখ্যাত সমাধান নিয়ে তিনি কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। কারণ, অনেক দর্শক হয়তো মূল গল্পটি জানেন।
তবে, তাঁর মতে, এতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। কারণ, যারা রহস্য পছন্দ করেন অথবা ভালো একটি নাটক দেখতে চান, তাঁদের কাছে এটি উপভোগ্য হয়েছে।
লুডউইগ বর্তমানে ‘ডেথ অন দ্য নাইল’ নামক আরেকটি নাটক নিয়ে কাজ করছেন, যা একই নামে ক্রিস্টির একটি উপন্যাসের নাট্যরূপ।
এই নাটক মঞ্চে আনার জন্য প্রয়োজন হবে একটি বিশাল নৌকার সেট। নাটকের সেট তৈরি নিয়ে তিনি বলেন, “আমি সবসময়ই থিয়েটার শিল্পীদের চ্যালেঞ্জ নিতে উৎসাহ দেই। তাঁরা এমন সমাধান খুঁজে বের করেন যা আমি কল্পনাও করতে পারি না।”
কেন লুডউইগ মনে করেন, একটি ভালো রহস্য-নাটক তৈরি করতে হলে গল্পের গতি বজায় রাখতে হয়। তাঁর মতে, ক্রিস্টির গল্পের জটিলতাগুলো মঞ্চের জন্য উপযুক্ত।
নাটকের প্লট তৈরিতে তিনি প্রচুর নোট নিয়ে থাকেন, যা তাঁর কাজে সহায়তা করে।
কমেডি এবং রহস্য—দুটি ধারাই লুডউইগের পছন্দের। তিনি বলেন, “কমেডি এবং রহস্য—উভয় ক্ষেত্রেই গল্পের মোড়গুলো দর্শকদের আকর্ষণ করে এবং শেষে সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়।”
‘মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’-এর নাটকে গোয়েন্দা পোয়ারোর চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রায় ৪০ মিনিটের একটি দীর্ঘ বক্তব্য রয়েছে, যা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
লুডউইগ জানান, “পোয়ারোর মনোজগতে প্রবেশ করানো এবং কীভাবে তিনি সমস্ত সম্ভাবনা বাতিল করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, তা দর্শকদের দেখানোর জন্য এটা জরুরি ছিল।”
কেন লুডউইগ মনে করেন, পোয়ারোর চরিত্রে হাস্যরস এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার মিশ্রণ চরিত্রটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। তাঁর মতে, পোয়ারো দেখতে কিছুটা অদ্ভুতুড়ে হলেও, তাঁর মস্তিষ্ক শার্লক হোমসের মতোই শক্তিশালী।
কেন লুডউইগ জানিয়েছেন, তিনি এখনো নিশ্চিত নন কেন ক্রিস্টি তাঁর গোয়েন্দা চরিত্রটির জন্য একজন বেলজিয়ানকে বেছে নিয়েছিলেন। সম্ভবত, শার্লক হোমসের সঙ্গে মিল এড়ানোর জন্যই এমনটা করা হয়েছিল।
আগাথা ক্রিস্টির কাজের প্রতি কেন লুডউইগের এই গভীর ভালোবাসাই তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। তাঁর কাজগুলো শুধু বিনোদনই দেয় না, বরং দর্শকদের মনে রহস্যের জগত তৈরি করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান