শিরোনাম: সংস্কৃতির সীমানা পেরিয়ে: মঙ্গোলীয় শিল্পী এনজির সুরে বিশ্বজয়
উলারবাটরের বরফ শীতল পরিবেশে বেড়ে ওঠা, গান যেন ছিল এনখজার্গাল এরখেমবায়েরের (এনজি) জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিবারের সবাই মিলে যখন পুরনো লোকগান গাইতেন, সেই স্মৃতি আজও অমলিন।
সেই এনজি, যিনি এখন বিশ্বজুড়ে পরিচিত, তাঁর সুরে মঙ্গোলীয় লোকসংগীত আর জ্যাজ-এর এক অপূর্ব মিশ্রণ ঘটিয়েছেন।
এনজির বয়স এখন তেত্রিশ। ঐতিহ্যবাহী মঙ্গোলীয় ‘লং সং’ গানের কৌশলকে কাজে লাগিয়ে তিনি তাঁর পরিবেশনা সাজান। ‘লং সং’ হলো মঙ্গোলীয় সংস্কৃতির এক বিশেষ ধারা, যেখানে কণ্ঠের মাধুর্য ফুটিয়ে তুলতে শব্দের বিস্তার ঘটানো হয়।
তাঁর কণ্ঠের কোমলতা আর গভীর আবেগ শ্রোতাদের মন জয় করে।
গত বছর চীন এবং ইউরোপের ১১টি দেশে কনসার্ট করেছেন এনজি। তাঁর গানের কথা হয়তো অনেকে বোঝেন না, কিন্তু তাঁর সুরে সবাই মুগ্ধ। জার্মানির মিউনিখে বসবাস করা এই শিল্পী জানান, “আমার গান শুনে যখন দর্শক হাসে, কাঁদে বা হাততালি দেয়, তখন মনে হয়, আমি যেন মুক্তি পেয়েছি।
নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার স্বাধীনতা পেয়েছি।”
এনজির চতুর্থ অ্যালবাম ‘সোনর’-এ আত্ম-অনুসন্ধানের সুর স্পষ্ট। এখানে তিনি ‘লং সং’-এর পরিবর্তে মৃদু স্বরে গান গেয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ‘উলবার’ গানে সূর্যাস্তের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন, যা শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়।
এই অ্যালবামে ১৯৮০ সালের জনপ্রিয় মঙ্গোলীয় গান ‘ইজিনের হেইয়ার’ -এর একটি নতুন সংস্করণও রয়েছে, যেখানে ড্রামস এবং রোডস পিয়ানোর সঙ্গে ফিউশন ঘটানো হয়েছে।
ছোটবেলার সেই গানের আসর থেকেই গানের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় এনজির।
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষিকা হওয়ার প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তিনি ‘লং সং’ শেখা শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, গানের আসল সুর খুঁজে পেতে হলে ‘সিংয়িং জিন’ বা কণ্ঠের জাদু থাকতে হয়।
আর তা আমার মধ্যে ছিল।”
২০১৪ সালে মিউনিখের গ্যোয়েটে-ইনস্টিটিউট থেকে আসা একটি জ্যাজ প্রকল্পের মাধ্যমে এনজির সঙ্গে পরিচয় হয়। এর পরেই তিনি জ্যাজ-এর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে দেন।
জ্যাজ-এর স্বাধীনতা আর গভীরতা তাঁকে মুগ্ধ করে।
“ছোটবেলায় মঙ্গোলীয় শিল্পীদের ইংরেজি গানের প্রতি আগ্রহ ছিল, অথবা স্থানীয় হিপ-হপ দলগুলোর গান শোনা যেত। মার্টিনের (জ্যাজ শিক্ষক) সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরেই আমি জ্যাজ-এর প্রেমে পড়ি।
জ্যাজ-এর জগৎটা অনেক বেশি মুক্ত, গভীর এবং এখানে ক্ষণিকের অনুভূতিগুলোও অনেক মূল্যবান,” জানান এনজি।
২০১৭ সালে প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের পর তিনি মিউনিখে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
এরপর ‘উরসগাল’ (২০২১) এবং ‘উলার’ (২০২৩) এর মতো প্রশংসিত অ্যালবাম উপহার দিয়েছেন তিনি।
‘সোনর’ অ্যালবামে জার্মান ভাষায় দুটি কথা-গান রয়েছে। জার্মান ভাষা তিনি মঙ্গোলিয়ায় গ্যোয়েটে-ইনস্টিটিউটে পড়ার সময় শিখেছিলেন।
এছাড়াও, ‘এর্gelt’ গানটিতে নিজের দেশ এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর আবেগ ফুটে উঠেছে। এনজি বলেন, “এই গানটি লেখার সময় আমি মঙ্গোলিয়া গিয়েছিলাম।
সেখানে গিয়ে মনে হয়েছিল, আমি যেন দুই সংস্কৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আছি।”
এনজি সবসময় নিজেকে একজন জ্যাজ শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
তিনি বিভিন্ন ধরনের শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে চান, বিশেষ করে র্যাপারদের সঙ্গে।
তাঁর মতে, তাঁর সংগীত জীবন যেন এক চলমান প্রক্রিয়া, যা এক জায়গায় আবদ্ধ থাকতে চায় না।
জ্যাজ, লং সং, মঙ্গোলিয়া কিংবা জার্মানি—কোথায় গিয়ে থামবেন, তা তিনি জানেন না, তবে গান থামাবেন না, এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান