**অস্ট্রেলিয়ায় প্রাক্তন প্রেমিকের হাতে তরুণীর নৃশংস হত্যা: মায়ের বর্ণনায় ভুক্তভোগীর চরম আতঙ্ক**
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের নিউক্যাসেল শহরে ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী থাকল বিশ্ব। প্রাক্তন প্রেমিকের হাতে ৭৮ বার ছুরিকাহত হয়ে নিহত হয়েছেন ২১ বছর বয়সী তরুণী, ম্যাকেনজি অ্যান্ডারসন।
এই মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত তরুনীর মা, ট্যাবিথা অ্যাক্রেট। তিনি জানান, তাঁর মেয়ে মৃত্যুর আগে “এমন এক ভয়ের মধ্যে ছিলেন, যা সম্ভবত কোনো মানুষ কোনোদিন অনুভব করতে চায় না।
গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ছিলেন ম্যাকেনজির প্রাক্তন প্রেমিক, ২৫ বছর বয়সী টাইরন থম্পসন। ঘটনার দিন, গভীর রাতে ম্যাকেনজির অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করেন তিনি।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, খুনের কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত টাইরনের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ ছিল। এমনকি, ঘটনার ১৬ দিন আগেও তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন।
আদালতে দেওয়া ভিকটিম ইমপ্যাক্ট স্টেটমেন্টে ট্যাবিথা অ্যাক্রেট তাঁর মেয়ের জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “যেদিন আমি মেয়ের মৃত্যুর খবর পাই, মনে হয়েছিল যেন পৃথিবীটা আমার চারপাশ থেকে ঘুরে যাচ্ছে।
আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল।” তিনি আরও জানান, ঘটনার পরে যখন তিনি মেয়ের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যান, তখনও যেন সেখানে সহিংসতার চিহ্ন লেগে ছিল।
মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ম্যাকেনজি সবসময় আতঙ্কে থাকতেন। তিনি আশঙ্কা করতেন, টাইরন তাকে মেরে ফেলবে।
মৃত্যুর আগে ম্যাকেনজি বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তা চেয়ে গার্হস্থ্য হিংসা বিরোধী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে যেন সুরক্ষা দরজা এবং ক্যামেরা লাগানো হয়।
কিন্তু, তাঁর সেই আকুতি পূরণ হয়নি। মৃত্যুর পর একটি সংগঠন জানায়, তারা ম্যাকেনজির সাহায্য চেয়ে করা আবেদনটি ‘বন্ধ’ করে দিয়েছে।
আদালতে অ্যাক্রেট আরও বলেন, “ম্যাকেনজি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সব চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সে বারবার সিস্টেমের কাছে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর মৃত্যু যেন একটি চলমান ট্র্যাজেডি ছিল।
তিনি আরও জানান, মেয়ের মৃত্যুর কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তিনি ম্যাকেনজির উপর হওয়া অত্যাচারের গভীরতা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেননি।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ঘটনার রাতে ম্যাকেনজির এক বন্ধু তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন।
তিনি দেখেন, টাইরন ম্যাকেনজিকে মাটিতে ফেলে ক্রমাগত ছুরিকাঘাত করছেন। পুলিশের কাছে টাইরন স্বীকার করেছেন, ঘটনার দিন তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল এবং ম্যাকেনজি ছুরি দেখালে তিনি সেটি কেড়ে নিয়ে মেয়েটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ও এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকেন।
আদালতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত টাইরন থম্পসনের ‘শাইজোঅ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার’-এর মতো মানসিক রোগের চিকিৎসা চলছিল। এই ঘটনার পরে তিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।
যদি কোনো ব্যক্তি গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার হন, তবে তাঁরা বাংলাদেশের স্থানীয় সহায়তা কেন্দ্র অথবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যোগাযোগ করতে পারেন।
এছাড়াও, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তার জন্য সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: