শিরোনাম: দেরিতে সনাক্ত হওয়া এডিএইচডি: একজন নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের নতুন দিগন্ত
জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, এতদিন আমরা হয়তো ভুল পথে হেঁটেছি। কারো কারো জন্য সেই উপলব্ধি আসে খুব অল্প বয়সে, আবার কারো কারো জীবনে এর দেখা মেলে অনেক দেরিতে।
কার্লা সোসেনকো নামের একজন নারীর গল্প তেমনটাই, যিনি মাঝ বয়সে এসে জানতে পারেন, তিনি আসলে ‘সাধারণ’ নন। সম্প্রতি প্রকাশিত হতে যাওয়া তাঁর বই ‘আই’ল লুক সো হট ইন আ কফিন’-এ তিনি নিজের জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন।
ছোটবেলায় ক্লিপেল-ট্রেনাউনি সিনড্রোম (Klippel-Trenaunay syndrome) নিয়ে জন্মেছিলেন কার্লা। শারীরিক ভিন্নতার কারণে অন্যদের থেকে আলাদা ছিলেন তিনি।
কিন্তু তাঁর জীবনের মোড় ঘোরানো ঘটনাটি ঘটে মধ্যবয়সে, যখন তিনি এডিএইচডি (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রথমে বিষয়টি তিনি সেভাবে বিশ্বাস করতে পারেননি।
কারণ, এডিএইচডি-র ধারণা তাঁর কাছে ছিল, চঞ্চল, দুরন্ত ছেলেদের মতো কিছু একটা।
সোসেনকোর বন্ধু মেলিসা, যিনি ছোটবেলায় এই সমস্যায় ভুগেছেন, তিনিই প্রথম বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। অতিমারীর সময় তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন, আর সেই সময়েই মেলিসা তাঁর মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখতে পান।
যেমন— তিনি প্রায়ই কিছু আনতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে যেতেন, ক্যালেন্ডারে ভুল তারিখ বসাতেন, রাতে অস্থির হয়ে এদিক-ওদিক পায়চারি করতেন, ঘুমের সমস্যা ছিল।
বিষয়গুলো তাঁর কাছে হয়তো নিছকই কৌতূহল বা উদ্বেগের কারণ ছিল, কিন্তু মেলিসার পরামর্শে তিনি একজন মনোবিদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর এডিএইচডি-র বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
এডিএইচডি সনাক্ত করা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। কারণ, অনেক সময় এর উপসর্গগুলো সেভাবে প্রকাশ পায় না।
কার্লার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিল। এই রোগ সনাক্ত হওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন, কেন ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় তিনি পিছিয়ে ছিলেন, কেন ক্লাসে মনোযোগী হতে পারতেন না, বা কেন সামান্য বিষয়ে তাঁর এত ভুল হতো।
তাঁর মনে হতে শুরু করে, হয়তো জগৎটাই তাঁর জন্য তৈরি হয়নি।
স্কুলে ভালো ফল করতে না পারায় তিনি হতাশ হতেন। পরীক্ষায় খারাপ করার কারণে তাঁর আত্মবিশ্বাসের অভাব হতো।
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হতো। কর্মজীবনেও তিনি একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
মিটিংগুলোতে তাঁর মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হতো, অনেক মিটিংয়ের বিষয়বস্তু তিনি বুঝতেই পারতেন না।
এই দেরিতে পাওয়া রোগ নির্ণয় তাঁকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন, তাঁর শরীর বা মন—কোনোটাই ভুল নয়।
তিনি যেমন, তেমনই ঠিক আছেন। যদি জগৎ তাঁর জন্য উপযুক্ত না হয়, তবে সেই ত্রুটি তাঁর নয়, বরং জগতেরই।
তিনি এখন ওষুধ সেবন করেন, যা তাঁকে এই সমাজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
কার্লা সোসেনকোর এই অভিজ্ঞতা আমাদের সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং এই ধরনের সমস্যাগুলো সম্পর্কে আরও বেশি আলোচনা করা প্রয়োজন।
সবারই বোঝা উচিত, ভিন্নতা মানেই কোনো ত্রুটি নয়। প্রত্যেকেরই নিজস্বতা রয়েছে, এবং সেই বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়েই আমাদের জীবন।
তথ্য সূত্র: পিপল