শিরোনাম: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন: অভিবাসীদের সংস্কৃতিতে নতুন দিগন্ত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে, ইউরোপ থেকে আসা অভিবাসীরা কীভাবে ব্রিটেনের সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, সেই গল্প তুলে ধরেছেন লেখক ওয়েন হ্যাদারলি তাঁর নতুন বই “দ্য এলিয়েনেশন এফেক্ট”-এ। বইটিতে লেখক দেখিয়েছেন, এই অভিবাসীরা শুধুমাত্র ব্রিটেনে আশ্রয়ই নেননি, বরং দেশটির শিল্প, স্থাপত্য এবং চিন্তাধারায় এনেছিলেন এক নতুন পরিবর্তন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপ থেকে আসা এই মানুষগুলো, যাদের মধ্যে ছিলেন শিল্পী, স্থপতি, লেখক এবং চিন্তাবিদ, তাঁরা শুরুতে হয়তো কিছুটা প্রতিকূলতার শিকার হয়েছিলেন। অনেকেই “শত্রু” হিসেবে চিহ্নিত হয়ে অন্তরীণও হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ব্রিটিশ সমাজে নিজেদের স্থান করে নেন এবং দেশটির সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেন।
হ্যাদারলি তাঁর বইয়ে তাঁদের অবদানগুলো তুলে ধরেছেন, যা ব্রিটিশ সমাজের চোখে হয়তো সেভাবে ধরা পড়েনি।
বইটিতে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে, কীভাবে এই অভিবাসীরা ব্রিটেনের স্থাপত্যে নতুনত্ব এনেছিলেন। “ব্রুটালিজম” স্থাপত্যশৈলীর কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যা কংক্রিট এবং জ্যামিতিক আকারের ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচিত।
এই ধরনের স্থাপত্যে তাঁদের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। শুধু স্থাপত্য নয়, চলচ্চিত্র এবং প্রকাশনা জগতেও তাঁদের প্রভাব ছিল গভীর।
লেখক নিকোলাস পেভসনারের কথা উল্লেখ করে হ্যাদারলি দেখিয়েছেন, কীভাবে বাইরের মানুষ হিসেবে এই অভিবাসীরা ব্রিটিশ সংস্কৃতিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পেরেছিলেন।
পেভসনারের বিখ্যাত উক্তি, “Neither English-born nor English-bred” -এর মাধ্যমে লেখক বুঝিয়েছিলেন, বহিরাগতরা প্রায়ই সমাজের লুকানো দিকগুলো সহজে উপলব্ধি করতে পারেন।
বইটিতে কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির কথাও উঠে এসেছে। এদের মধ্যে ছিলেন স্থপতি বেরথোল্ড লুবেটকিন এবং আর্ন গোল্ডফিংগার।
হ্যাদারলি তাঁদের বিপ্লবী চিন্তাভাবনার কথা তুলে ধরেছেন, যা ব্রিটিশ সমাজের চিরাচরিত ধারণাকে ভেঙে দিতে সাহায্য করেছিল।
তবে, হ্যাদারলি কিছু সমালোচনারও শিকার হয়েছেন।
তিনি কিছু ক্ষেত্রে অভিবাসীদের কাজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে কঠোর মন্তব্য করেছেন। যেমন, আলোকচিত্রী বিল ব্র্যান্ডের “অতিরিক্ত অ্যাংলোফিলিয়া” এবং শিল্পী আর্নস্ট গুমব্রিখের “ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের অভাব”-এর সমালোচনা করেছেন তিনি।
মোটকথা, “দ্য এলিয়েনেশন এফেক্ট” বইটি শুধু অভিবাসন এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের একটি গল্প নয়, বরং এটি পরিবর্তনের একটি দলিল।
এটি বুঝিয়ে দেয়, কীভাবে ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষজন একটি সমাজের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বইটিতে ব্রিটেনের সংস্কৃতিতে অভিবাসীদের অবদানগুলো নতুন করে মূল্যায়ন করা হয়েছে, যা বর্তমান বিশ্বের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
তথ্যসূত্র: The Guardian