কানাডার সাধারণ নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ফল, কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়েলিভরের পরাজয়
কানাডায় অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরনের অঘটন ঘটেছে। দেশটির কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়েলিভর নির্বাচনে নিজের আসনটি পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি যে আসনে জয়ী হয়ে আসছিলেন, এবার সেই কার্লটন এলাকাতেই (নির্বাচনী এলাকা) পরাজিত হয়েছেন তিনি। কানাডার রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত, পয়েলিভরের এমন পরাজয়কে অনেকেই অপ্রত্যাশিত হিসেবে দেখছেন।
নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি তাদের আসন সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হলেও, সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পায়নি। মার্ক কারনির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি জয়লাভ করে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনে পয়েলিভরের পরাজয় তাঁর দল এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
জানা গেছে, কার্লটন আসনে লিবারেল পার্টির প্রার্থী ব্রুস ফ্যানজয় জয়লাভ করেছেন। পয়েলিভর ২০০৪ সাল থেকে এই আসনটি ধরে রেখেছিলেন। এবারের নির্বাচনে সেখানে মোট ৯১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যাদের অধিকাংশই নির্বাচনী সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেওয়া এক ভাষণে পয়েলিভর পরাজয় স্বীকার করে নেন। তবে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, এই দলের নেতৃত্ব দেওয়াটা তাঁর জন্য সম্মানের। যদিও নির্বাচনের ফলাফলে হতাশ হয়ে অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে (হাউস অফ কমন্স) আসন না থাকায়, পয়েলিভর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এমনকি বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাসভবন ‘স্টর্নওয়ে’ তে তাঁর থাকার বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
যদি তিনি দলের নেতা হিসেবে বহাল থাকতে চান, তাহলে তাঁকে অন্য কোনো কনজারভেটিভ এমপিকে তাঁর আসনটি ছেড়ে দিতে হবে। এরপর পয়েলিভরকে উপনির্বাচনে অংশ নিতে হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। কানাডার গভর্নর জেনারেলকে আসন শূন্য হওয়ার ১১ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হয়। ফলে, সম্ভবত আগামী শরৎকাল পর্যন্ত পয়েলিভরকে পার্লামেন্টে ফিরতে অপেক্ষা করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দলের অভ্যন্তরে পয়েলিভরের নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছিল। অনেকেই মনে করেন, দলের কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর পদত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, পয়েলিভর ২৫ বছর বয়সে কানাডার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২২ সালে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। তিনি এক সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে পরিচিতি লাভ করেন।
এই নির্বাচনে শুধু পয়েলিভরই নন, নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) নেতা জগমিত সিংও তাঁর বার্নাবি আসনটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া গ্রিন পার্টির সহ-নেতা জোনাথন পেডনল্টও মন্ট্রিলের একটি আসনে পরাজিত হয়েছেন।
নির্বাচনে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের আগের আসনগুলোর মধ্যে ১৭টি আসন হারিয়েছে। ফলে তারা সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা হারাবারও সম্ভবনা রয়েছে। বিরোধী দলের মর্যাদা হারালে তারা পার্লামেন্টের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এর মধ্যে প্রশ্ন করার সুযোগ এবং গবেষণাখাতে অর্থ পাওয়ার মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান