গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ ৬০ দিনে পড়েছে, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে হাজারো মানুষ।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। টানা ৬০ দিন ধরে চলা এই অবরোধের ফলে খাদ্য, পানীয় জল এবং জরুরি ঔষধের অভাবে সেখানকার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের মানবিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme) জানিয়েছে, তাদের গাজার সব বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে এবং খাদ্য মজুতও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা (OCHA)-এর মতে, ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার কারণে অনেক পরিবার তাদের কাছে থাকা খাদ্য সামগ্রী ও জরুরি মজুতও হারাতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও, রান্নার জ্বালানি এবং গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ খাবার তৈরি করতে পারছে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেখানকার ৭০ শতাংশ এলাকার বাসিন্দাদের হয় এলাকা ছাড়তে হয়েছে, না হয় তাদের সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ফলে কৃষক এবং পশু পালনকারীরা তাদের জমিতে যেতে পারছেন না। গাজার অবশিষ্ট কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রেও খাদ্য সরবরাহ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক সংস্থা (UNRWA) জানিয়েছে, সেখানকার অনেক পরিবার জীবনধারণের জন্য অনিরাপদ খাবার গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
একইসাথে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক মুখপাত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় খাদ্য সহায়তা বোঝাই ট্রাকগুলো সীমান্তেই আটকে আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাজার ভেতরে খাদ্যদ্রব্যের দাম ৫০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে সেখানকার খাদ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (IPC) গাজায় খাদ্য সংকট এবং অপুষ্টির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই মূল্যায়নের কাজ এক সপ্তাহ ধরে চলবে। এতে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রশিক্ষিত কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন।
গাজায় ইসরায়েলের হামলার শুরু থেকে আইপিসি অন্তত চারবার সতর্কবার্তা জারি করে জানিয়েছে, সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
সেখানকার হাসপাতালগুলোতে আহত ও অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা কর্মীদের চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
এদিকে, হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমের পক্ষে জোরালোভাবে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের ‘নিরাপত্তা স্বার্থের’ কারণে তারা জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা UNRWA-এর সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য নয়।
জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ইসরায়েলকে কী করতে হবে, সে বিষয়ে শুনানির আয়োজন করেছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।