এখানে লন্ডনের বিখ্যাত টেট মডার্ন জাদুঘরের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো। এই জাদুঘরটি শুধু একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র নয়, বরং শিল্পকলার এক জীবন্ত ইতিহাস।
গত ২৫ বছরে এখানে ঘটেছে এমন কিছু ঘটনা, যা শিল্পপ্রেমীদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।
টেট মডার্ন: ২৫ বছরে শিল্পের আলোড়ন
২০০০ সালে যখন টেট মডার্নের দরজা খোলা হয়, তখন শিল্পী লুই বুর্জোয়া-র বিশাল মাকড়সা ‘মামান’-এর স্থাপনাই ছিল অন্যতম আকর্ষণ। বিশাল আকারের এই মাকড়সাটি দর্শকদের জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে উৎসাহিত করে।
এরপর ২০০২ সালে শিল্পী আনিশ কাপুরের ‘মার্সিয়াস’ স্থাপন করা হয়, যা ছিল বিশাল আকারের একটি লাল রঙের কাঠামো। এটি দর্শকদের কল্পনার জগৎকে নতুন রূপে সাজিয়েছিল।
২০০৩ সালে শিল্পী ওলাফুর এলিয়াসনের ‘দ্য ওয়েদার প্রজেক্ট’ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই শিল্পকর্মটি দর্শকদের মধ্যে আবহাওয়ার প্রতি এক বিশেষ অনুভূতি তৈরি করে।
এই প্রদর্শনীতে দর্শকরা সূর্যের আলো এবং প্রতিবিম্বের সাথে একাত্ম হয়েছিলেন, যা ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
২০০৭ সালে ডোরিস সালসেদোর একটি বিশেষ শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়, যেখানে ফ্লোরের মধ্যে বিশাল ফাটল তৈরি করা হয়েছিল। এই শিল্পকর্মটি দর্শকদের মধ্যে গভীর মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
এরপর ২০০৮ সালে ফ্ল্যাক্সাস আন্দোলনের সদস্য অ্যালিসন নোলস-এর একটি অভিনব পরিবেশনা ছিল, যেখানে বিশাল আকারের একটি সালাদ তৈরি করা হয়।
এটি দর্শকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিল্পকে আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলেছিল। একই বছর ন্যান গোল্ডিনের ‘দ্য ব্যালাড অফ সেক্সুয়াল ডিপেন্ডেন্সি’ প্রদর্শিত হয়, যা ছিল ব্যক্তিগত সম্পর্কের একটি গভীর চিত্র।
২০০৯ সালে রিচার্ড প্রিন্সের ‘স্পিরিচুয়াল আমেরিকা’ প্রদর্শিত হয়, যেখানে একটি বিতর্কিত ছবি উপস্থাপন করা হয়েছিল। এই কাজটি সমাজে নারীত্বের ধারণা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিল।
একই বছর, রবার্ট মরিসের ‘বডিস্পেসমোশনথিংস’ নামক একটি প্রদর্শনী হয়, যেখানে দর্শকরা বিভিন্ন কাঠামোর সাথে মিশে যাওয়ার সুযোগ পান।
২০১০ সালে শিল্পী আই ওয়েইওয়েই-এর ‘সানফ্লাওয়ার সিডস’ প্রদর্শনীটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। চীন থেকে আসা লক্ষ লক্ষ সিরামিক সানফ্লাওয়ার বীজ একটি বিশাল স্থান জুড়ে স্থাপন করা হয়েছিল।
এরপর ২০১১ সালে টাকিতা ডিনের ‘ফিল্ম’ প্রদর্শনীটি চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল। ২০১২ সালে ইয়ায়োই কুসামার ‘ইনফিনিটি মিরর রুমস’ দর্শকদের এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।
এই প্রদর্শনীতে আয়নার ব্যবহার দর্শকদের মধ্যে এক অসীমতার ধারণা তৈরি করে। একই বছর, মার্ক রথকোর ‘ব্ল্যাক অন মেরুন’ নামক চিত্রকর্মটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা সংরক্ষণে দীর্ঘ সময় লেগেছিল।
২০১৩ সালে জার্মান ইলেক্ট্রনিক মিউজিক ব্যান্ড ক্রাফটওয়ার্ক-এর লাইভ পারফরম্যান্স ছিল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ২০১৪ সালে শিল্পী আঁরি মাতিসের কাজগুলো নিয়ে একটি বিশাল প্রদর্শনী হয়, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
২০১৬ সালে টেট মডার্নের নতুন একটি ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়, যা শহরের সুন্দর দৃশ্য দেখবার সুযোগ করে দেয়। একই বছর স্যার এলটন জনের ফটোগ্রাফি সংগ্রহের প্রদর্শনী হয়।
২০১৭ সালে ‘সোল অফ এ নেশন’ শিরোনামে কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পকলার এক অসাধারণ প্রদর্শনী হয়। ২০১৮ সালে টেট মডার্নের কর্মীদের শিল্পকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়, যা কর্মীদের সৃজনশীলতাকে সকলের সামনে তুলে ধরে।
২০১৯ সালে শিল্পী কারা ওয়াকার-এর ফোয়ারা ‘ফন্স আমেরিকানাস’ ছিল সাম্রাজ্য এবং তার সংস্কৃতির প্রতি এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি। ২০২১ সালে অ্যানিকা ই-এর ‘ইন লাভ উইথ দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রদর্শনীতে রোবোটিক জেলিফিশ বা বায়বীয় জীব দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সবশেষে ২০২৩ সালে পল সেজানের শিল্পকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়, যা শিল্পকলার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
আসছে ২০২৬ সালে ট্রেসি এমিন-এর একটি বড় প্রদর্শনী হওয়ার কথা রয়েছে, যা টেট মডার্নের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে চলেছে।
টেট মডার্ন তার যাত্রা পথে শিল্পকলার বিভিন্ন দিক উন্মোচন করে দর্শকদের নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian