নব্বইয়ের দশকের আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, যেখানে স্কুলের এক ছাত্রের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে জড়িয়ে পড়া এক শিক্ষিকা, পামেলা স্মার্টের স্বামীর নৃশংস হত্যারহস্য উন্মোচিত হয়েছিল। ঘটনার প্রায় ৩৫ বছর পর, আজও সেই বিতর্কিত মামলার স্মৃতিচিহ্নগুলো যেন অমলিন।
১৯৯০ সালের ১লা মে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডেরি শহরে, পামেলা স্মার্টের স্বামী গ্রেগ স্মার্টকে তার অ্যাপার্টমেন্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৪ বছর বয়সী গ্রেগ ছিলেন একজন বীমা প্রতিনিধি।
ঘটনার তদন্তে পুলিশ ২১ বছর বয়সী পামেলাকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে। পামেলা স্থানীয় একটি হাই স্কুলে মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তদন্তে জানা যায়, তাঁর স্কুলেরই এক ছাত্র, ১৫ বছর বয়সী উইলিয়াম “বিলি” ফ্লিনের সঙ্গে তাঁর অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
তদন্তে বিলি ফ্লিন স্বীকার করে যে, তিনিই গ্রেগ স্মার্টকে হত্যা করেছেন। তবে, তাঁর দাবি ছিল, পামেলার নির্দেশেই তিনি এই কাজ করেছেন। যদিও পামেলা বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
১৯৯১ সালে ষড়যন্ত্র ও হত্যার অভিযোগে পামেলাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর, পামেলার বিচার প্রক্রিয়া এবং তাঁর জীবনযাত্রা নিয়ে তৈরি হয় বই ও সিনেমা, যা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় “টু ডাই ফর” (To Die For) নামের একটি বই, যা পরে একই নামে চলচ্চিত্রে রূপ নেয়।
যেখানে অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান পামেলার চরিত্রে অভিনয় করেন।
পামেলা স্মার্টের জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৬ই আগস্ট, ফ্লোরিডার কোরাল গ্যাবলেসে। তাঁর পরিবার পরে নিউ হ্যাম্পশায়ারে চলে আসে। ১৯৮৯ সালে তিনি গ্রেগ স্মার্টকে বিয়ে করেন।
গ্রেগ স্মার্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিলি ফ্লিন, যিনি পামেলার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন, দ্বিতীয়-ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। এছাড়া, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও কয়েকজন যুবককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গ্রেগ হত্যারহস্যের বিচার চলাকালীন সময়ে, পামেলা দাবি করেছিলেন, তাঁর স্বামী সম্ভবত “কিছু বখাটে, মাদকাসক্ত” ব্যক্তির দ্বারা নিহত হয়েছেন। তবে, তদন্তের পর তাঁর এই বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
আদালতে পামেলার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর স্বামীর ১৪০,০০০ মার্কিন ডলার (সেই সময়ে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার সমান) বীমার টাকা পাওয়ার জন্য এই ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
পামেলা স্মার্ট এখনও কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করছেন। তিনি তাঁর কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন, কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়।
কারাগারে থাকাকালীন তিনি তিনটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং একটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি তাঁর সহবন্দীদের পড়াশোনায় সাহায্য করেন এবং একজন ধর্মযাজক হিসেবেও কাজ করেন।
২০২১ সালে পামেলা তাঁর কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং গ্রেগ স্মার্টের পরিবারের কাছে ক্ষমা চান। তিনি তাঁর ভুলের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে বলেন, “আমিই দায়ী।” তবে, তাঁর এই ক্ষমা প্রার্থনার পরেও আদালত তাঁর সাজা কমানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
পামেলা স্মার্টের এই মামলার ঘটনা একদিকে যেমন মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে, তেমনই বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা এবং আইনি জটিলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনার পর সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানুষজন তাঁদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন।
তথ্যসূত্র: পিপলস