২৩ বছর বয়সে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর, অনেকেই যখন তার কথা বিশ্বাস করতে চাইছিল না, সিডনি টাউলের জীবন যুদ্ধের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল। বিরল এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে যাওয়া এবং সেই অভিজ্ঞতা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি, নিজের অসুস্থতা এবং লড়াইয়ের গল্প সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সিডনি, যা অনেকের কাছেই দৃষ্টান্তস্বরূপ।
২০২৩ সালের মে মাসে, ডার্টমাউথ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে লস অ্যাঞ্জেলেসে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন সিডনি। নিয়মিত শরীরচর্চা ও যোগাভ্যাস করতেন, কিন্তু হঠাৎ করেই তার শরীরে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়।
পেটে একটি ফোলা অংশ অনুভব করার পর, তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি বাইল ডাক্ট ক্যান্সার বা পিত্তনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত। সাধারণত, এই রোগ বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, তবে সিডনির ক্ষেত্রে এমনটা ছিল বিরল।
ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর সিডনি ভেঙে পড়েননি, বরং এই কঠিন সময়ে নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন। তিনি দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, যেখানে কেমোথেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
চিকিৎসার পাশাপাশি, নিজের অভিজ্ঞতার কথা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য টিকটকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। তার এই পদক্ষেপ ব্যাপক সাড়া ফেলে, যা পরবর্তীতে তাকে আরও সক্রিয় করে তোলে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সিডনির এই যাত্রা অনেকের মনে সাহস জুগিয়েছে। তার ভিডিওগুলোতে রোগীরা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা সিডনিকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। বর্তমানে, টিকটকে প্রায় ৭ লক্ষ ৭০ হাজার এবং ইনস্টাগ্রামে ৬০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে তার।
চিকিৎসার অংশ হিসেবে, সিডনির লিভারের একটি অংশ অপসারণ করা হয় এবং গলব্লাডারও বাদ দেওয়া হয়। যদিও শুরুতে কেমোথেরাপি চালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এরপর তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে যান এবং সেখানে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই কঠিন সময়ে সিডনির পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবরা সবসময় তার পাশে ছিলেন। মায়ের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলা, বন্ধুদের সমর্থন, তাকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছে। সিডনি মনে করেন, কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা খুব জরুরি।
ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেই সিডনির শারীরিক অবস্থা দেখে তার রোগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের ধারণা ছিল, ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে হয়তো চুল পড়ে যাবে অথবা রোগী দুর্বল হয়ে পড়বেন।
এই ধরনের মন্তব্য সিডনির জন্য কষ্টকর ছিল। তিনি চেয়েছিলেন, মানুষ যেন ক্যান্সারের বিষয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসে এবং রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।
নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, সিডনি প্রমাণ করেছেন যে, অসুস্থতা সব সময় দৃশ্যমান নাও হতে পারে। তিনি সবাইকে আরও সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, সবারই নিজস্ব লড়াই আছে এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতি রাখা উচিত। সিডনির এই লড়াই অন্যদেরও সাহস জোগাচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
তথ্য সূত্র: পিপল