বাংলাদেশে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে শিংগলস ভ্যাকসিনের সম্ভাবনা
বসন্ত রোগের জীবাণু থেকে সৃষ্ট শিংগলস, যা এক ধরনের বেদনাদায়ক চর্মরোগ, তা শুধু অস্বস্তিই নয়, হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিংগলস ভ্যাকসিনের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
এই গবেষণাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে।
সাধারণ ভাষায় বললে, শিংগলস হলো জলবসন্ত বা চিকেন পক্সের ভাইরাস শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকার পর পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠা। সাধারণত, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, অথবা বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
শিংগলস হলে শরীরে বেদনাদায়ক ফুসকুড়ি হয়, যা মারাত্মক কষ্টের কারণ হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকদের করা এই গবেষণায় ১২ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শিংগলস ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি এমন ব্যক্তিদের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল।
বিশেষ করে, পুরুষ এবং ৬০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই সুরক্ষা বেশি দেখা গেছে। এমনকি, ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপানের মতো অনিয়মিত জীবনযাপনকারীদের ক্ষেত্রেও এই ভ্যাকসিনের ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
গবেষকরা মনে করেন, শিংগলস ভাইরাসের কারণে রক্তনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যা রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায় এবং এর ফলস্বরূপ হৃদরোগ হতে পারে। ভ্যাকসিন এই প্রক্রিয়াকে বাধা দিতে পারে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে আসে।
এই গবেষণায় ব্যবহৃত ভ্যাকসিনটি ছিল পুরনো প্রজন্মের। বর্তমানে আরও উন্নতমানের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, যেমন – শিংগ্রিক্স। যদিও এই গবেষণায় পুরনো ভ্যাকসিনের উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে, তবুও এটি শিংগলস ভ্যাকসিনের হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর সম্ভাবনাকে সমর্থন করে।
তবে, এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। যেমন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপর এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
বাংলাদেশে হৃদরোগ একটি গুরুতর সমস্যা। তাই, এই ধরনের গবেষণা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগের প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভ্যাকসিনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা জরুরি।
আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন