মার্কিন সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র মার্ক টোয়েনকে নিয়ে নতুন জীবনী লিখছেন খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ও লেখক রন চেরনও। আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হতে যাওয়া এই বই, “মার্ক টোয়েন”, লেখক হিসেবে চেরনওয়ের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এর আগে তিনি জর্জ ওয়াশিংটন, ইউলিসিস এস. গ্রান্ট এবং আলেক্সান্ডার হ্যামিলটনের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে কাজ করেছেন। হ্যামিলটনের জীবন অবলম্বনে রচিত তাঁর “হ্যামিল্টন” বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
নতুন এই জীবনী লেখার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে এল? ১৯৭০-এর দশকে ফিলাডেলফিয়ায় মঞ্চে মার্ক টোয়েনের চরিত্রে অভিনেতা হ্যাল হলব্রুকের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন চেরনও।
টোয়েনের সাদা স্যুট, গোঁফ এবং মুখে অবিরাম হাস্যরসের বাণ শুনে তিনি এতটাই প্রভাবিত হন যে, এই কিংবদন্তি সাহিত্যিকের জীবন নিয়ে একটি বই লেখার কথা দীর্ঘদিন ধরে তাঁর মাথায় ছিল।
চেরনওয়ের মতে, টোয়েন ছিলেন আধুনিক সেলিব্রিটির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
বইটিতে টোয়েনের জীবনের নানা দিক উন্মোচন করা হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, যেমন – বিবাহ, আর্থিক সংকট, এবং বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
লেখক টোয়েনের রাজনৈতিক ভাবনা এবং ভেতরের দ্বন্দ্বগুলোও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। টোয়েনের বিখ্যাত উক্তিগুলোর মাধ্যমে তাঁর সময়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতি তাঁর মনোভাবও তুলে ধরা হয়েছে।
যেমন, তিনি রুজভেল্টের তীব্র সমালোচনা করে বলেছিলেন, রুজভেল্ট ছিলেন যেন “রাজনৈতিক জগতের টম সয়্যার”।
তবে এই জীবনীতে টোয়েনের কিছু বিতর্কিত দিকও আলোচনা করা হয়েছে, বিশেষ করে তরুণীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে।
টোয়েন তাঁদের “অ্যাঞ্জেলফিশ” ডাকতেন। এই বিষয়ে চেরনও বলেন, “ঐ সময়ে টোয়েনের আচরণকে একজন প্রিয় এবং হাস্যরসিক মানুষের শিশুদের প্রতি দুর্বলতা হিসাবে দেখা হতো।
তবে, আজকের দিনে আমরা সেই একই আচরণকে অদ্ভুত এবং উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দেখি। উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই বিষয়টা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।”
বইটিতে টোয়েনের পরিবারের সদস্যদের কথাও উঠে এসেছে। তাঁর মেয়ে ক্লারার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল, যা অনেক পাঠকের মনে গভীর রেখাপাত করবে।
টোয়েনের আর্থিক জীবনের উত্থান-পতনও এখানে স্পষ্টভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে তিনি একদিকে সমাজের ধনী শ্রেণির সমালোচনা করেছেন, আবার অন্যদিকে তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
রন চেরনওয়ের মতে, মার্ক টোয়েনের চরিত্রে আত্ম-অহমিকা এবং গভীর দুঃখবোধ বিদ্যমান ছিল।
টোয়েন নিজে তাঁর ভেতরের এই দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাঁর কৌতুকপূর্ণ ব্যক্তিত্বের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক গভীর বিষণ্ণতা, যা তিনি তাঁর রচনার মাধ্যমে প্রকাশ করতেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস