সিঙ্গাপুর: এশিয়ার সবচেয়ে সুখী শহর, উন্নয়নের নতুন দিগন্ত।
একটি সুখকর শহরের সংজ্ঞা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কারো জন্য প্রিয়জনের সান্নিধ্য, কারো বা পছন্দের খাবার—এগুলো সুখের কারণ হতে পারে। তবে এমন কিছু বিষয় আছে যা সব মানুষের জীবনেই আনন্দের যোগান দেয়।
উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা, ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা, সবুজ স্থান এবং একটি সহযোগী সমাজ—এগুলো মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে তোলে। আর জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ক্ষেত্রে কিছু শহর অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
সম্প্রতি, ‘Institute for Quality of Life’ তাদের বার্ষিক ‘হ্যাপি সিটি ইনডেক্স’ প্রকাশ করেছে, যেখানে বিভিন্ন শহরের সুখের সূচকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এই সূচকে, শিক্ষা, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি, অর্থনীতি, গতিশীলতা, পরিবেশ রক্ষা, সবুজ এলাকার সুযোগ এবং উদ্ভাবন—এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই বিষয়গুলো কেবল নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং শহরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও সরাসরি প্রভাব ফেলে।
সূচকটিতে শহরগুলোকে কোনো নির্দিষ্ট স্থান দেওয়া হয়নি, তবে ভালো করার ভিত্তিতে ‘গোল্ড’, ‘সিলভার’ ও ‘ব্রোঞ্জ’ খেতাব দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা তৈরি করতে ৮২টি সূচকের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষা, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি, অর্থনীতির জোর, পরিবেশগত নিয়মকানুন, সবুজ স্থান এবং কর্মজীবনের ভারসাম্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে, সিঙ্গাপুরকে এশিয়ার সবচেয়ে সুখী শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এটি তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
ইনস্টিটিউট তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সিঙ্গাপুর একটি অনন্য শহর-রাষ্ট্র, যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সুশাসন এবং নগর উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। প্রায় ৫৯ লক্ষ মানুষের আবাসস্থল এই শহরটি ৭৩৪.৩ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।
২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরের বাজেট ছিল ৭৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়া মানেই যে একটি শহর সুখী হবে, তা নয়। তবে সিঙ্গাপুর অন্যান্য উপায়েও তাদের নাগরিকদের সুখ নিশ্চিত করে।
তাদের বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়, স্বচ্ছ সরকার ব্যবস্থা এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা উল্লেখযোগ্য। নাগরিকদের জন্য এখানে রয়েছে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা এবং প্রতি ১০০০ জনে প্রায় ২.৮ জন চিকিৎসক।
এর ফলে এখানকার মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮৩ বছর।
সিঙ্গাপুরের সংস্কৃতিও বেশ আকর্ষণীয়। এখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও জাতির মানুষের বসবাস, যা খাদ্য, হোটেল এবং পর্যটন খাতে ভিন্নতা এনেছে।
পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও সিঙ্গাপুর একটি দৃষ্টান্ত। এখানে আসা পর্যটকদের সংখ্যাও অনেক।
তালিকার শীর্ষে থাকা অন্য শহরগুলোর মধ্যে কোপেনহেগেন অন্যতম, যা স্বাস্থ্যসেবা, উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো বিষয়গুলোতে ভালো স্কোর করেছে।
এছাড়াও, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে এবং ডেনমার্কের আরহাস ও বেলজিয়ামের আন্টওয়ার্প যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি এবং মিনিয়াপলিস গোল্ড খেতাব অর্জন করেছে।
সুখী শহরগুলোর সম্পূর্ণ তালিকা ‘Institute for Quality of Life’-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার