টিভি তারকা ও ফ্যাশন ডিজাইনার টিনা নোলস, যিনি বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী বেয়ন্সে ও সোলাঞ্জ নোলসের মা, সম্প্রতি তাঁর নতুন স্মৃতিচারণমূলক বই ‘ম্যাট্রিয়ার্ক’ নিয়ে কথা বলেছেন। এই বইয়ে তিনি তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে সন্তানদের মানুষ করার ক্ষেত্রে তাঁর নেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার কথা তুলে ধরেছেন।
মা দিবসের প্রাক্কালে, আসুন জেনে নিই টিনা নোলসের জীবন থেকে পাওয়া কিছু মূল্যবান শিক্ষা।
টিনা নোলস ছোটবেলায় টেক্সাসের গ্যালভিস্টনে বেড়ে ওঠেন, যেখানে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিভেদ ছিল স্পষ্ট। সেই সময়ে শিশুদের, বিশেষ করে মেয়েদের, চুপচাপ থাকতে এবং নিজেদের বিষয়ে বেশি কথা বলতে নিরুৎসাহিত করা হতো।
টিনার মা সবসময় বলতেন, ‘সুন্দর মানেই ভালো কাজ করা’, অর্থাৎ, নিজের কাজ দিয়েই পরিচয় দিতে হবে। কিন্তু টিনার মধ্যে ছিল প্রবল আত্মপ্রত্যয় এবং নিজের মতামত প্রকাশ করার সাহস। তাঁর এই স্বভাবে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে তাঁকে ‘ব্যাডএ্যাস টেনি বি’ নামে ডাকত।
টিনা মনে করেন, শিশুদের সবসময় উৎসাহিত করা উচিত, তাদের সম্ভাবনাকে বিকশিত হতে দিতে হবে। শিশুদের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, “আমি এখনো মাঝে মাঝে সেই পুরোনো কথাগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করি, যখন মনে হয়, বেশি আলোচনা না করাই ভালো। কিন্তু আমি অভিভাবকদের বলতে চাই, আপনারা আপনাদের সন্তানদের পাশে থাকুন। তাদের এমন বার্তা দিন যা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করবে।”
টিনা তাঁর মেয়েদের সবসময় আত্ম-ভালোবাসা এবং নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি দেখেছেন, তাঁর মা, অ্যাগনেজ বেইয়েন্স, সবসময় সন্তানদের সুন্দর পোশাক পরাতেন, যদিও তাঁরা দরিদ্র ছিলেন।
টিনার মতে, পোশাকের প্রতি এই মনোযোগ তাঁদের দারিদ্র্যের অনুভূতি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করেছে। তিনি তাঁর মেয়েদের ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলেন এবং তাঁদের পোশাক তৈরি করতেও সাহায্য করতেন।
ভাই-বোনের সম্পর্ক সুন্দর রাখতেও মায়েদের সচেতন থাকতে হবে। টিনা জানান, তিনি প্রথমবার যখন বেয়ন্সকে মঞ্চে দেখেন, তখনই বুঝতে পেরেছিলেন সঙ্গীতই তাঁর জীবন।
সোলাঞ্জেরও অন্য কিছু করার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু টিনা চাননি সেও সঙ্গীতের জগতে আসুক। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, বেয়ন্সের দলের অন্য শিশুরা সোলাঞ্জকে সবসময় চুপ থাকতে বলত, কারণ সে দলের কোরিওগ্রাফি করতে চাইত।
এরপর তিনি তাঁদের মধ্যেকার সম্পর্ক ভালো করার জন্য থেরাপিস্টের সাহায্য নিয়েছিলেন।
এছাড়াও, টিনা নোলস তাঁর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকার কথা বলেছেন। গত বছর তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সবাইকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওপর জোর দিতে বলেছেন।
তিনি মনে করেন, মহিলারা প্রায়ই অন্যদের জন্য এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখেন না। তাই, সবারই উচিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা।
টিনা নোলসের জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি, শিশুদের সঠিকভাবে লালন-পালন করা, আত্ম-অনুরাগ তৈরি করা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাঁর এই অভিজ্ঞতা আমাদের সমাজে মায়েদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন