দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধের বিভীষিকা ক্যামেরাবন্দী করা খ্যাতনামা আলোকচিত্রী লী মিলারের অজানা কিছু ছবি এবার প্রদর্শিত হতে চলেছে। লন্ডনের ‘ফটো লন্ডন’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে তাঁর তোলা দুর্লভ ছবিগুলো দেখা যাবে, যেখানে যুদ্ধের ধ্বংসলীলার পাশাপাশি সৈন্যদের স্বাভাবিক জীবনও ক্যামেরাবন্দী হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার লী মিলারের তোলা ছবিগুলো যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সৈন্যদের জীবনযাত্রার এক ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে। ফ্রান্সের সেন্ট-মালো এবং জার্মানির বিভিন্ন স্থানে তোলা ছবিগুলোতে যুদ্ধের চরম পরিস্থিতি যেমন দেখা যায়, তেমনই দেখা যায় মার্কিন সৈন্যদের স্বাভাবিক জীবন। এই ছবিগুলো যুদ্ধের বিভীষিকা এবং এর মানসিক প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
লী মিলার আর্কাইভের প্রধান কেরি নেগাহবান জানিয়েছেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা মিলারকে গভীরভাবে বিষণ্ণ করে তুলেছিল। যুদ্ধ শেষে যখন তিনি ব্রিটেনে ফিরে আসেন, তখন তিনি গভীর হতাশায় ভুগছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে দেখা ভয়াবহ দৃশ্যগুলো তিনি যেন নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছিলেন।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এবং প্রসবোত্তর বিষণ্ণতায়ও ভুগেছিলেন। এই কারণে তিনি তাঁর স্বামীকেও যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
লী মিলারের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি কেট উইন্সলেট অভিনীত ‘লী’ নামের একটি বায়োপিক তৈরি হয়েছে, যেখানে এই সাহসী নারীর জীবন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মিলার ‘ভোগ’ এবং ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের হয়ে কাজ করার সময় ফ্রন্টলাইনের ছবি তুলতেন।
ছবি তোলার কারণে মার্কিন সৈন্যদের সঙ্গে তার কিছু সমস্যাও হয়েছিল। সেন্ট-মালো মুক্ত করার পর, ছবি তোলার অভিযোগে তাকে তিন দিনের জন্য গৃহবন্দী করা হয়েছিল।
প্রদর্শনীতে মিলারের তোলা ছবিতে দেখা যায়, কীভাবে যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে ধ্বংসযজ্ঞ চলেছিল। এছাড়া, নর্ম্যান্ডিতে ৪৪তম ইভাকুয়েশন হাসপাতালের বাইরে একটি জিপের বাইরে বুটজোড়া এবং বার্চটেসগার্ডেনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল কেনেথ ওয়ালেস ও কর্নেল জন হেইন্টজেসের ছবিও রয়েছে।
ছবিতে দেখা যায়, তাদের পেছনে পাহাড়ের উপরে হিটলারের বাড়িটি আগুনে জ্বলছে। মিলারের ভাষায়, তখনো সেখানে এসএস বাহিনী সক্রিয় ছিল।
ফটো লন্ডনে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আলোকচিত্র নিয়ে কাজ করা অন্য একজন শিল্পী হলেন জেসি গ্লাজার্ড। তিনি এবং ইউজিনিয়া স্কভারস্কা মিলে ইউক্রেনের গে-সৈনিকদের জীবন ক্যামেরাবন্দী করেছেন। তাঁদের তোলা ছবিগুলো যুদ্ধের প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো তুলে ধরেছে।
সাধারণত যুদ্ধের ছবি ফ্রন্টলাইন বা বোমা হামলার পরের দৃশ্য নিয়ে তৈরি হয়, কিন্তু এই ছবিগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁরা ১০ জন গে-সৈনিকের ছবি তুলেছেন, যাদের অনেকেই রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সময় শিশু ছিল।
স্কভারস্কা জানান, সম্ভাব্য বৈষম্য এবং রাশিয়ার হাতে বন্দী হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, এই সেনারা তাঁদের ছবি তোলার প্রকল্পে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মূল কথা ছিল, ‘যদি মরেও যাই, তবে গে হিসেবেই মরব।’ তাঁদের মতে, তাঁরা কে, সেই সত্য জানানোটা খুবই জরুরি ছিল।
লন্ডনের সোমারসেট হাউসে ১৪ থেকে ১৮ই মে পর্যন্ত ফটো লন্ডন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান