ব্রিটিশ সিরিয়াল কিলার ফ্রেড ও রোজ ওয়েস্ট: নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত তথ্যচিত্র নিয়ে আলোচনা।
সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধ বিষয়ক তথ্যচিত্রের চাহিদা বেড়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া তেমনই একটি তথ্যচিত্র হলো ‘ফ্রেড অ্যান্ড রোজ ওয়েস্ট: আ ব্রিটিশ হরর স্টোরি’।
এই তথ্যচিত্রটি কুখ্যাত ব্রিটিশ সিরিয়াল কিলার দম্পতি ফ্রেড ও রোজ ওয়েস্টের জীবনের ভয়ংকর দিকগুলো তুলে ধরেছে। তবে, এই তথ্যচিত্রটি নিয়ে উঠেছে গুরুতর কিছু প্রশ্ন, যা এর বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
ফ্রেড ও রোজ ওয়েস্ট ছিলো এক নিষ্ঠুর দম্পতি, যারা ১৯৯০ এর দশকে ইংল্যান্ডের গ্লস্টার শহরে বসবাস করতেন। তাদের নৃশংসতার শিকার হয়েছিলেন বহু তরুণী।
ফ্রেড ওয়েস্টের বাড়ি, যা ‘২৫ ক্রমওয়েল স্ট্রিট’ নামে পরিচিত ছিল, সেখানে পাওয়া গিয়েছিল অন্তত নয় জন নারীর দেহাবশেষ। ফ্রেড খুন করার কথা স্বীকার করলেও, রোজের ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে নানান জল্পনা।
তথ্যচিত্রে ফ্রেড ও রোজের অপরাধের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাদের শিকারদের মধ্যে ছিলেন তরুণী, যাদেরকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো।
এমনকি, তাদের মরদেহ বাড়ির ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখা হতো। এই নৃশংসতা শুধু একটি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং পুরো সমাজের জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্রেড ওয়েস্টের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ধর্ষণের অভিযোগ ছিল, কিন্তু সে সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
যা তাদের অপরাধ আরও বাড়িয়ে তোলে। পরবর্তীতে, যখন তাদের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়, তখন ফ্রেড আত্মহত্যা করে। বিচারের সম্মুখীন হতে হয় রোজ ওয়েস্টকে, যিনি ১০টি খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান।
তবে, এই তথ্যচিত্রের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, এটি ঘটনার গভীরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অপরাধীদের মানসিকতা, তাদের সম্পর্কের জটিলতা, অথবা সমাজে এর প্রভাব – এই বিষয়গুলো নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা করা হয়নি।
সমালোচকরা মনে করেন, তথ্যচিত্রটি ঘটনার ভয়াবহতা দেখিয়ে দর্শকদের চমকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ঘটনার পেছনের কারণগুলো অনুসন্ধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তথ্যচিত্রটি নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করেন, এটি নিছক দর্শক আকর্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও, তাদের দুঃখ-কষ্টকে পুঁজি করে অর্থ উপার্জনের অভিযোগও উঠেছে।
সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত তথ্যচিত্রগুলো সমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিতে পারে। অপরাধের কারণ, বিচার প্রক্রিয়া এবং ভুক্তভোগীদের প্রতি সংবেদনশীলতা – এই বিষয়গুলো তুলে ধরা জরুরি।
কিন্তু, ‘ফ্রেড অ্যান্ড রোজ ওয়েস্ট: আ ব্রিটিশ হরর স্টোরি’ সেই দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বলেই মনে হয়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান